• উলুবেড়িয়া, ভরা মরশুমে গোলাপের ‘কাঁটা’ ছত্রাক
    এই সময় | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, উলুবেড়িয়া: ‘দৃষ্টিতে আর হয় না সৃষ্টি আগের মতো গোলাপ ফুল।’ পরিস্থিতি তেমনই। সামনেই সরস্বতী পুজো। তার পরে রয়েছে রোজ় ডে, ভ্যালেন্টাইনস ডে। কিন্তু গোলাপের সেই সৌরভ কোথায়? বরং উৎসবের মুখে দুশ্চিন্তার আনাগোনা চাষিদের মুখে। হাওড়া গ্রামীণের ফুলের গ্রাম বলে পরিচিত বাগনানের বিভিন্ন এলাকায় গোলাপের বাগিচায় ছত্রাক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এই সময়ে বাজারে গোলাপের চাহিদা যেমন বেশি থাকে, তেমনই দামও থাকে চড়া। কিন্তু এ বার কী হবে?

    চলতি মরসুমে আবার ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটেছে বাগিচায়। ফলে বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা করছে চাষিরা। বিগত ছ’বছর ধরেই বাগনানের বিস্তীর্ণ এলাকার গোলাপ গাছ বার বার ছত্রাকে আক্রান্ত হচ্ছে। শীত চলে যাওয়ার সময় এই সংক্রমণ ঘটে। গোলাপকে বাঁচানোর ‌স্থায়ী কোনও সমাধান এখনও নেই। ফুল ও কুঁড়ি ঝরে পড়ছে।‌ পাতায় দেখা দিচ্ছে বাদামি দাগ।‌ বাগনান–২ নম্বর ব্লকের ওড়ফুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁকুড়দহ, হেলেদি, কাঁটাপুকুর, নাচক, জলপাই, বিরামপুর–সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় হরেক ফুলের চাষ হয়। ফুল এখানকার কয়েক হাজার পরিবারের রুটি–রুজিরএকমাত্র মাধ্যম।‌ এখানকার ফুল যায় মল্লিক বাজার ও কোলাঘাট ফুল মার্কেটে।‌

    এখানে কয়েকশো একর জমিতে গোলাপের চাষ হয়। এ বারও বাঁকুড়দহ এলাকার বেশ‌ কিছু গোলাপ গাছ ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছে। পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে, ফুল ও কুঁড়ি ঝরে পড়ছে। বাঁকুড়দহ গ্রামের ফুলচাষি পুলক ধাড়া, বৈদ্যনাথ ধাড়া, উজ্জ্বল খাড়াদের বক্তব্য, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে শীতের শেষের দিকে গোলাপ গাছে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটছে।‌ সামনেই রয়েছে সরস্বতী পুজো, ভ্যালেন্টাইনস ডে ও রোজ় ডে। বাজারে এইসময়ে গোলাপের চাহিদা থাকে।‌ কিন্তু ছত্রাকের সংক্রমণে আমরা শঙ্কিত।‌’

    ছত্রাক সংক্রমণে ফুল ঝরে পড়লে চাহিদা মতো ফুল বাজারে পাঠানো যাবে না।‌ বর্তমানে ১০০ পিস লাল গোলাপ বাজারে বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়।‌ অন্যান্য রংয়ের গোলাপের ১০০ পিসের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।‌ পুলক ধাড়া বলছিলেন, ‘এই সময়ে গোলাপ বিক্রি করে একটু লাভের মুখ দেখি।‌ কিন্তু আবার যে ভাবে গোলাপ গাছে ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে, তাতে চিন্তিত।‌’

    সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুলব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের বক্তব্য, ‘এখন মাঠে বছরে নানা ধরনের চাষ হচ্ছে। ফলন বাড়াতে চাষিরা বিভিন্ন রাসায়নিক সার প্রয়োগ করছে।‌ মাটির কার্যকারিতা কমছে।‌ ফলে ছত্রাকে আক্রান্ত হচ্ছে গাছ। আমরা চাষিদের বলছি কৃষি দপ্তরের পরামর্শ মতো ওষুধ ব্যবহার করতে।’ এর আগেও বাগনানে গোলাপ গাছে ছত্রাকের সংক্রমণ ঠেকাতে জেলা উদ্যানপালন দপ্তর ও টালিগঞ্জের একটি সংস্থার ছত্রাক বিশেষজ্ঞ, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী, জগৎবল্লভপুর কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের আধিকারিকরা গোলাপ বাগিচা পরিদর্শন করেছিলেন।‌ তাঁরা চাষিদের গাছ বাঁচানোর উপায়ও বলে দেন। কিন্তু সঙ্কট কাটেনি।

    জেলা উদ্যানপালন দপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘বিষয়টি এখনও আমাদের নজরে আসেনি, খোঁজ খবর করছি।‌ তেমন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)