দিব্যেন্দু সিনহা, জলপাইগুড়ি
এক–দু’বছর নয়, চার দশকের অপেক্ষা। লোকসভা, বিধানসভা এমনকী পার হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। নেতাদের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ডকাইচাঁদ নদীর উপরে আজও সেতু হয়নি। অনেক দিন অপেক্ষার পরে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের নগর বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ধর্মদেবপাড়ার বাসিন্দারা নিজেরাই তৈরি করেছেন বাঁশের সাঁকো। সারা বছর সেই সাঁকো দিয়ে মোটরবাইক, সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করলেও বর্ষার সময়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। জলের তোড়ে সাঁকো ভেসে যাওয়ায় অন্য কোনও উপায় থাকে না।
সেতুর প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা নীলকমল রায়। তিনি বলেন, ‘ডকাইচাঁদ নদীর ও পারে নগর বেরুবাড়ি এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাট, অঞ্চল অফিস, চা–বাগানের অফিস–সহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রয়েছে। এ পারেও একাধিক চা বাগান, প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। ধর্মদেবপাড়া, অমরখানা, রামদেবপাড়া, সিঙ্গিমারি গ্রামের প্রায় ৫ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে কাজের প্রয়োজনে ও পারে যেতে হয়। সাঁকো না থাকলে বেরুবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থকেন্দ্র বা হাটে যেতে হলে ১০ কিলোমিটার ঘুরপথে যেতে হয়। স্বাভাবিক ভাবে সময় বেশি লাগে। যাতায়াত খরচও বেড়ে যায়।’
নদীর উপরে হিউম পাইপ বসিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয় সেই আশির দশকে। এলাকার বহু মানুষ, ছাত্রছাত্রী ওই পথ ব্যবহার করতেন। কিন্তু বছর ঘুরতেই বর্ষার সময়ে নদীর জলের তোড়ে হিউম পাইপ উড়ে গিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আর কিছু হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ ইসব আলি বলেন, ‘সেই আশির দশক থেকেই এই নদীর উপরে পাকা সেতু তৈরির দাবি নিয়ে পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন, সমস্ত জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেতু তৈরি করে দেওয়া হয়নি। অথচ নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসনের আধিকারিক, সকলেই এসে দেখে গিয়েছেন। এর আগে বিজয়চন্দ্র বর্মন যখন সাংসদ ছিলেন, তিনি এসে আমাদের হাল দেখে গিয়েছেন। এসেছেন জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি নুরজাহান বেগমও। গত বছর সদর ব্লকের বিডিও সাহেব এসে কথাও দিয়েছিলেন। আশা ছিল, সেতু তৈরি করা হবে। কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে।’
গ্রামে কেউ অসুস্থ হলে নাকানিচোবানি দশা হয় বলে জানিয়েছেন কুলীন রায়। তিন পুরুষের বাস। তাঁর কথায়, ‘সাঁকো তৈরি করতে খরচ প্রচুর। যে কারণে চাঁদা তুলতে হয়। আবার মেরামতির জন্যও আলাদা খরচ। সাঁকো পেরিয়ে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে না পারায় অসুস্থ ব্যক্তি এবং প্রসূতিদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা দেখা দেয়।’ জলপাইগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিনয়কুমার রায় বলেন, ‘ওই জায়গায় সেতু তৈরি করতে যে খরচ হবে, সেই টাকা পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে ব্যয় করা সম্ভব নয়। তবে সেতু তৈরি করার জন্য জেলা পরিষদ এবং জেলা প্রশাসন ভাবছে।’ তবে নেতা থেকে প্রশাসন, কথা না রাখায় হতাশ বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সারথি রায়। তিনি বলেন, ‘গ্রামবাসীদের পাশাপাশি আমি নিজেও উদ্যোগী হয়ে প্রশাসনের দুয়ারে গিয়েছি। কাজ এগোয়নি।’