• এমএসএমই নিয়ে হতাশ শিল্পাঞ্চলের উদ্যোগপতিরা
    এই সময় | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, আসানসোল ও দুর্গাপুর: কেন্দ্রীয় বাজেটে লাভ দেখছে না রাজ্যের শিল্পাঞ্চল। এখানকার উদ্যোগপতি থেকে চেম্বার অফ কমার্সগুলির প্রতিনিধিদের দাবি, রাষ্ট্রায়ত্ত কোনও সংস্থায় নতুন ইউনিট চালু, নিয়োগ কিংবা এমএসএমই–র ক্ষেত্রে আশার কথা শোনা যায়নি এই বাজেটে। বিহারে কোশী–মেচি সংযোগের কথা বলা হলেও বহু প্রতীক্ষিত বার্নপুরের সঙ্গে বাঁকুড়া–পুরুলিয়াকে যুক্ত করতে দামোদর সংযোগের কথা বলা হলো না। সেই অর্থে শিল্পাঞ্চলের প্রাপ্তির ভাণ্ডার শূন্য বলেই মনে করছেন তাঁরা।

    ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ খৈতান বলেন, ‘অসমে সার কারখানা হবে বলে ঘোষণা হয়েছে বাজেটে, অথচ দুর্গাপুরে অত্যন্ত নামী একটি সার কারখানা বন্ধ। সেটা চালু করা কিংবা হিন্দুস্তান কেবলসের রূপনারায়ণপুর ইউনিট বা বন্ধ বার্ন স্ট্যান্ডার্ড চালু করে নতুন নিয়োগের ভাবনা নেই। কোনও বড় শিল্প এখাানে গড়ে উঠছে না।’ তিনি জানাচ্ছেন, বাজেটে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উদ্যোগীদের জন্য তেমন কিছু বলা নেই। দুর্গাপুর থেকে বিদেশে বিমান চালানোর পরিকল্পনা এই বাজেটে ঘোষণার আশা ছিল, কিন্তু হয়নি।

    ক্ষুদ্র ও মাঝারি সিমেন্ট সংস্থাগুলির মালিক সংগঠনের পক্ষে পবন গুটগুটিয়া বলেন, ‘ছোট সিমেন্ট কারখানার মালিকরা বহু বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন, কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে বড় সিমেন্ট কারখানার মতো একই হারে দাম না নিয়ে কিছু ভর্তুকির ব্যবস্থা করুক কেন্দ্র। কিন্তু এই বাজেটেও সেটা হলো না। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে বড় সিমেন্ট কারখানাগুলির সঙ্গে মাঝারি বা ছোট কারখানাগুলির টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

    তাঁর সংযোজন, ‘বিহারে কোশী–মেচি নদীকে জোড়ার জন্য সেতুর কথা ঘোষণা করা হলো অথচ বার্নপুরের সঙ্গে দামোদরের উপর বাঁকুড়া–পুরুলিয়া সংযোগের কোনও ঘোষণা এই বাজেটে নেই। দামোদরের উপর সেতু নির্মাণের জন্য পূর্বতন ইস্পাতমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান ৫০ কোটি টাকা ঘোষণা করেছিলেন। ওই সেতু তৈরি হলে দক্ষিণবঙ্গের ব্যবসায়ী থেকে ক্রেতা, সকলেই লাভবান হতেন।’

    রানিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পক্ষে সভাপতি রোহিত খৈতান বলছেন, ‘আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বেশ কিছু সুবিধা পাব বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু কিছুই তো দেওয়া হলো না। ছয় বছর হয়ে গেল বার্নপুর বিমানবন্দর তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে, কিন্তু চালু করতে পারল না।’

    পশ্চিম বর্ধমান জেলা চেম্বার অব কমার্সের অজয় খৈতানের বক্তব্যও এক। তিনি বলেন, ‘জামুড়িয়ার সঙ্গে বীরভূমকে জুড়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অজয়ের উপর সেতু তৈরির দাবি রয়েছে। সেটা হয়নি।’ অন্য দিকে, জামুড়িয়ার ১৫টি বড় ও মাঝারি লৌহ–ইস্পাত, বিদ্যুৎ উৎপাদন কারখানাগুলির মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পবন মামুন্ডিয়া হতাশ গলায় জানান, এই সব শিল্পের ক্ষেত্রে আলাদা সুযোগ বা ছাড়ের কথা এই বাজেটে বলা হয়নি।

    তবে ভিন্ন সুর পাওয়া গিয়েছে দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রতন আগরওয়ালের গলায়। তিনি বলেন, ‘এ বারের বাজেট খুব ভালো হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণের পরিমাণ ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা করা হয়েছে। যাঁরা স্টার্ট–আপ বিজ়নেস শুরু করতে চাইছেন, তাঁরা ২০ কোটি টাকা ঋণ পাবেন। উদ্যোগপতিদের দেওয়া হবে ২ কোটি টাকা ঋণ। এ সব লোনের জন্য সিকিউরিটির প্রয়োজন হবে না। এ বার বহু তরুণ ব্যবসা করতে এগিয়ে আসবেন।’ টিএমটি রড উৎপাদনে যুক্ত উদ্যোগপতি জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘উদ্যোপতিদের জন্য ভালো বাজেট হয়েছে। ব্যবসা শুরুর জন্য ঋণ দেওয়ার যে স্কিমের কথা বলা হয়েছে, তাতে অনেকেই এগিয়ে আসবেন। কর্মসংস্থানের সুযোগও হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)