সৌমিত্র ঘোষ ■ বেলুড়
সাধারণ মানুষকে তাঁদের সামর্থ্যের মধ্যেই চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে এ বার লেজ়ার পদ্ধতিতে যন্ত্রণাহীন অস্ত্রোপচার শুরু হল বেলুড়ের শ্রমজীবী হাসপাতালে।
এত দিন কলকাতার বিশেষজ্ঞ হাসপাতালগুলিতেই এই অস্ত্রোপচারের সুবিধা ছিল। কিন্তু তা অনেকটাই সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে। সাধারণ মানুষকেও এই চিকিৎসা পরিষেবা দিতে সম্প্রতি লেজ়ার পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার শুরুর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয় বেলুড়ের শ্রমজীবী হাসপাতালে। কেনা হয় লেজ়ারের যন্ত্র ও আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সরঞ্জাম। অত্যন্ত স্বল্প মূল্যেই সাধারণ রোগীদের ফিশার, পাইলসের মতো পুরনো রোগের লেজ়ার পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের কাজ শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে শ্রমজীবী হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক শীর্ষেন্দু সাহা এইসব অস্ত্রোপচার করছেন এখানে।
এ দিন এই চিকিৎসক বলেন, ‘অনেক কম যন্ত্রণা হবে এই লেজ়ার পদ্ধতির অস্ত্রোপচারে। রোগীকে অস্ত্রোপচারের পরের দিনই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়াও সম্ভব। এত দিন যে পদ্ধতিতে পায়ু সংক্রান্ত অসুখের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করতে হতো, তা রোগীর জন্য যথেষ্ট কষ্টকর ও অস্ত্রোপচারের পর উপশম হতেও বেশ কিছু দিন বিশ্রামের প্রয়োজন হতো। এখন অস্ত্রোপচারের কয়েকদিন পর থেকেই রোগী নিজের কাজকর্মে ফিরতে পারবেন। খরচও অনেক কম হবে।’
দীর্ঘ দিন পেশাগত কারণে অতিরিক্ত সাইকেল চালানোর ফলে অর্শের রোগী হাওড়ার কোনার বাসিন্দা বছর ৪৮–এর কার্তিক মণ্ডল বেশ বাড়াবাড়ি রকমের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করেন তিনি। এক পরিচিতের মাধ্যমে যোগাযোগ করে শ্রমজীবী হাসপাতালে অর্শের চিকিৎসা করাতে আসেন। চিকিৎসক তাঁকে দেখে রোগের উপশমে দেরি না করে অবিলম্বে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। বৃহস্পতিবারই লেজ়ার পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার হয় কার্তিকের। সফল অস্ত্রোপচারের পর তিনি ভালো আছেন বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার তিনি বাড়ি ফিরেছেন।
এ ধরনের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে বেসরকারি নামী হাসপাতালে ৮০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকাও নেওয়া হয়ে থাকে। মাঝারি মানের বেসরকারি হাসপাতালেও ৫০ হাজারের কম টাকা নেওয়া হয় না রোগীর পরিবারের থেকে। সেখানে শ্রমজীবী হাসপাতালে মাত্র ১০-১২ হাজার টাকাতেই লেজ়ার অস্ত্রোপচার সম্ভব হচ্ছে। মূলত খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অনেকেই পেশাগত কারণে এই ধরনের অসুখে আক্রান্ত হন। খাদ্যাভ্যাসজনিত কারণে যেখানে–সেখানে তেলঝাল মশলা দেওয়া রাস্তার খাবার খাওয়ার অভ্যাস থেকেও অনেকে পাইলস ও ফিশারের মতো অসুখের শিকার হন। অনেকে বংশানুক্রমিক কারণেও এই ধরনের অসুখে ভোগেন। সমাজের সব স্তরেই এই অসুখের বিস্তার রয়েছে বলে জানান চিকিৎসক।
এত দিন প্রচলিত অস্ত্রোপচারে অনেক ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচারের পরে রোগীকে ৭-৮ দিন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হতো। লেজ়ার পদ্ধতির চিকিৎসায় তার প্রয়োজন নেই। একদিন পরেই রোগী বাড়ি যেতে পারেন। এই অস্ত্রোপচারের সাফল্যে স্বভাবতই খুশি শ্রমজীবী পরিবারের সবাই। শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্পের সভাপতি ফণীগোপাল ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘আমরা গরিব, খেটে খাওয়া ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য এই স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে পেরে খুশি। দ্রুত চিকিৎসা করিয়ে রোগী কাজে ফিরতে পারলে তাঁরই উপকার হবে।’