• পুনর্বিচার চেয়ে হাই কোর্টে যেতে চায় নির্যাতিতার পরিবার, মালদহে গিয়ে কথা আইনজীবীর সঙ্গে
    আনন্দবাজার | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • পুনর্বিচার চেয়ে ফের কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে আরজি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতার পরিবার। রবিবার মালদহে গিয়ে এমনটাই জানালেন নির্যাতিতার বাবা-মা।

    ব্যক্তিগত আইনজীবী তড়িৎ ওঝার সঙ্গে দেখা করতে রবিবার মালদহে যান আরজি করের নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা। ইংরেজবাজারে আইনজীবীর বাড়িতে দীর্ঘ ক্ষণ তাঁর সঙ্গে কথা হয় তাঁদের। এর পরেই তাঁরা জানিয়েছেন, আরজি কর-কাণ্ডে শীঘ্রই হাই কোর্টে পুনর্বিচারের আবেদন জানাতে চলেছেন তাঁরা। নির্যাতিতার পরিবারের দাবি, দোষী সিভিক সঞ্জয় রায়কে সামনে দাঁড় করিয়ে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করা হচ্ছে। তদন্তে নানা অসঙ্গতিও রয়েছে। কারণ, স্নিফার ডগ দিয়ে তদন্ত করা হলেও এখনও পর্যন্ত সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্য জমা দেওয়া হয়নি। এমনকি সেই তথ্য তাঁদের জানানোও হয়নি। এমনই নানা কারণ দেখিয়ে উচ্চ আদালতে নতুন করে বিচারের আবেদন জানাতে চলেছেন তাঁরা।

    কোন কোন পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টে পুনর্বিচারের আবেদন করা যেতে পারে, তা নিয়ে আইনজীবীর পরামর্শ নিতেই রবিবার মালদহে গিয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। ব্যক্তিগত আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনাও করেছেন তাঁরা। তার পরেই নির্যাতিতার মা জানিয়ে দেন,তদন্তপ্রক্রিয়ায় তাঁদের আস্থা নেই। গোটা তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রথম দিন থেকেই তাঁদেরকে ধোঁয়াশায় রাখা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, হয়তো প্রকৃত দোষীরা প্রভাবশালী বলেই তাদেরকে আড়াল করা হচ্ছে। প্রমাণ সামনে আনা হচ্ছে না। নির্যাতিতার মায়ের কথায়, ‘‘ঘটনার দিন পুলিশের পায়ে ধরলেও আমরা ভিতরে ঢুকতে পারিনি। অথচ পুলিশের কর্তারা অনেকেই সেমিনার হলে জড়ো হয়েছিলেন। সেটাও তো আইনবিরুদ্ধ কাজ! ময়নাতদন্তে আমরা দেখেছি যে মেয়ের গলায় দাগ, আঙুলের ছাপ ছিল। কিন্তু সিবিআই থেকে শুরু করে কোনও পুলিশ অফিসার— কেউই আঙুলের ছাপ নেননি। আমার মেয়ের মুখে, ঘাড়ে কামড়ের দাগ ছিল। সেখান থেকে কোনও তথ্যপ্রমাণ নেওয়ারও চেষ্টা করা হয়নি। পুলিশ এসে তদন্ত করেছে, কিন্তু সেই রিপোর্ট আমরা দেখতে পারিনি। পরের দিনই তড়িঘড়ি স্বাস্থ্যসচিব, সন্দীপ ঘোষ এবং চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সকলে মিলে স্বাক্ষর করে ওই জায়গাটি ভেঙে দেন। সঞ্জয় রায় দোষী, কিন্তু আরও অনেকেই দোষী রয়েছেন। এটা একটা প্রাতিষ্ঠানিক খুন। এখানে প্রতিষ্ঠানের সবাই জড়িত।’’

    একই সুর নির্যাতিতার বাবার গলাতেও। সিবিআইয়ের উপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনিও। তাঁর কথায়, তদন্ত যাতে সঠিক পথে এগোয়, তা নিশ্চিত করার জন্যই তাঁরা নতুন করে বিচারের আবেদন জানাতে চলেছেন। নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘আমার ভাইয়ের বউ এবং ভাইপো যখন আরজি করে গিয়েছিল, তখন তারা দেখে যে, কলকাতা পুলিশের স্নিফার ডগ সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন, স্নিফার ডগ যদি আনাই হয়ে থাকে, সেই রিপোর্ট কোথায়? পুলিশ কুকুর কিছু পেল কি না, সেই তথ্য আমাদের সামনে আনা হল না কেন? তদন্ত যদি সঠিক পথেই চলত, তা হলে যারা অপরাধী, তারা ধরা পড়ত। তা হলে আর নতুন করে উত্তর খোঁজার জন্য আমাদের আদালতে আদালতে ঘোরার দরকার হত না!’’

    এ বিষয়ে আইনজীবী তড়িৎ বলছেন, ‘‘আরজি করের ঘটনায় শুধুমাত্র সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া হল। এই যুক্তি কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আসলে এই মামলায় আরও যারা প্রথম থেকে যুক্ত, তাদের ধরাই হয়নি। প্রথম তদন্তে কলকাতা পুলিশ যা করেছে, তার উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে চার্জশিট বানিয়েছে সিবিআই।’’ আইনজীবীর মতে, সঞ্জয় দোষী প্রমাণিত হলেও বাকি দোষীরা এখনও অধরাই। সে কারণেই হাই কোর্টে পুনর্বিচারের আবেদন করতে চলেছে নির্যাতিতার পরিবার।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)