নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: ছৌ-এর সাজে সাজছেন দেবী সরস্বতী। দেবী প্রতিমা তৈরি হচ্ছে সম্পূর্ণ ছৌ নাচের সজ্জা দিয়ে। ছৌয়ের মুখোশ দিয়ে তৈরি হয়েছে দেবীর মুখমণ্ডলও। পুরুলিয়ার এমএম হাইস্কুলের এবারের সরস্বতী পুজোর থিমই যেন এক টুকরো চড়িদা। স্কুলের এই ভাবনা প্রশংসা কুড়াতে শুরু করে দিয়েছে জেলার বাসিন্দাদের। স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি বিলাল খান বলেন, পুরুলিয়া জেলার গর্ব ছৌ। ছৌ নাচ এবং ছৌ মুখোশের হাত ধরে পুরুলিয়ার সুখ্যাতি পৌঁছে গিয়েছে বিদেশেও। ছৌয়ের হাত ধরে জেলায় এসেছে পদ্মশ্রী। তাই পুরুলিয়ার এই ঐতিহ্যকে পড়ুয়াদের কাছে তুলে ধরতে আমরা ছৌ-এর সাজে মা সরস্বতীকে সাজানোর ভাবনা নিয়েছি। পুরুলিয়ার ছৌ-এর গুরুত্ব কতখানি, স্কুলের গণ্ডি থেকেই শিখুক ছাত্রছাত্রীরা।
প্রসঙ্গত, এর আগে দুর্গাপুজো, কালীপুজোয় ছৌ নাচের মুখোশ দিয়ে মণ্ডপ সাজতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু, সরস্বতী পুজোয় ছৌয়ের সংস্কৃতির ছোঁয়া এই প্রথমবার বলে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের।
পরিচালন সমিতির সভাপতির দাবি, এই ভাবনা মূলত স্কুলের শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার দাসের এবং পান্না কর্মকারের। প্রতিমা সাজিয়ে তুলছেন শিল্পী সঞ্জু শীল। মণ্ডপ সজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন সুশীল কুমার কুইরি। তাঁর কথায়, স্কুলের একটি হলঘরেই আমরা ছোট্ট চড়িদা তৈরি করছি। অন্যান্য জেলায় ছৌকে নিয়ে যেভাবে মাতামাতি রয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে পুরুলিয়ায় কোথাও যেন তা ভাটা পড়েছে। আমরা তা উজ্জীবিত করতে চাইছি। পড়ুয়াদের মধ্যে ছৌ নিয়ে আরও আগ্রহ বাড়াতে চাইছি। তিনি আরও বলেন, প্রতিমার মুখ ছৌ-এর আদলে হচ্ছে। একটা মানুষ যেমন ছৌয়ের মুখোশ পরে, তেমনই সরস্বতী প্রতিমারও মুখ থাকছে। তার উপরেই থাকছে ছৌ মুখোশ।
প্রসঙ্গত, পুরুলিয়ার এমএম হাইস্কুল জেলার অন্যতম প্রাচীন স্কুল। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তনীদের মিলিয়ে রয়েছে পুনর্মিলন উত্সব কমিটি। স্কুলের বহু প্রাক্তনী আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। প্রত্যেকে বছরভর নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত থাকলেও সরস্বতীপুজোর দিনটিতে স্কুল প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হন। তারপর জমে ওঠে আড্ডা। পুজোর দু’দিন ধরে প্রত্যেকে আনন্দ উত্সবে মেতে থাকেন।