• গুপ্তধনের সন্ধানে ‘দুষ্টু’ খুদেরা! বাড়ির ভগ্নস্তূপে মিলল প্রচুর রুপোর কয়েন
    বর্তমান | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সুমন তেওয়ারি, আসানসোল: ‘কাকু, রুপোর কয়েন নাও, আমাদের চকোলেট দাও’—একদল খুদের আর্জিকে গুরুত্ব দেননি দোকানদার। দেওয়ার কথাও নয়। এমন তো অনেক খুদেই আসে। চকোলেট খাওয়ার আবদার করে। কাকু বলে দেন, ‘পয়সা ওখানে রেখে দে। ডিবে থেকে নিয়ে নে।’ 


    শনিবার তখন সন্ধ্যা। অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন দোকানদার। একই ভাবে বলেছিলেন, ‘ওখানে টাকা রেখে চকোলেট নিয়ে চলে যা। বেশি জ্বালাস না।’ খুদেদের ফের আর্জি, ‘আচ্ছা তুমি একবার কয়েনগুলো হাতে নিয়ে দেখো না। একরাশ বিরক্তি নিয়ে কাকু বললেন, ‘দে দেখি।’ হাতে নিয়ে দোকানদারের চক্ষুচড়কগাছ অবস্থা! সত্যিই তো কয়েনগুলি রুপোর! কিন্তু খুদেরা এগুলি পেল কীভাবে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ফাঁস হয়ে যায় খুদেদের গুপ্তধন উদ্ধারের কাহিনি। মুখে মুখে তা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। কেউ কেউ ঘটনাস্থলে গিয়ে লুকিয়ে নেন কিছু কয়েন। গ্রামের এক বাসিন্দা খবর দেন পুলিসকে। সালানপুর থানার রূপানায়ারণপুর ফাঁড়ির পুলিস দ্রুত এসে কয়েন উদ্ধার করেন। সবমিলিয়ে ১০৯টি প্রাচীন কয়েন পুলিস উদ্ধার করতে পেরেছে। নিয়ম মেনে বিষয়টি জেলাশাসককে লিখিত ভাবে জানাবে পুলিস। প্রশাসনিক পদক্ষেপ যা‌ই ঩হোক, সালানাপুর থানার পাহাড়পুরের এই গুপ্তধন উদ্ধারের খবর এখন চর্চার কেন্দ্রে।  স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য দিনের মতো গ্রামের খুদেরা ভেঙে পড়া দত্ত বাড়ির টিবি বা স্তূপের কাছেই খেলা করছিল। তারাই প্রথমে মাটির নিচে চকচকে কিছু দেখতে পায়। জনা পাঁচেক খুদে মিলেই মাটি খোঁড়া শুরু করে। একটি টিনের বাক্স থেকে বেশকিছু কয়েন তারা বের করে আনে। সেই সব কয়েন নিয়ে চকোলেট কেনার পরিকল্পনা করেছিল খুদেরা। নিজেদের মধ্যে সমান ভাবে কয়েনগুলি ভাগও করে নিয়েছিল তারা। কিন্তু চকোলেট কিনতে গিয়েই তাদের এই গোপন অভিযান ফাঁস হয়ে যায়। খুদেরা না বুঝেই কয়েন ভাগ করলেও বড়দের কয়েকজন লোভে পড়ে কয়েনগুলি লুটের চেষ্টা করে বলেও জানা যায়। গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ দত্ত পুরো বিষয়টি রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির আইসি অরুনাথ ভট্টাচার্যকে জানান। তিনি দ্রুত কয়েন উদ্ধারে সচেষ্ট হন। পুলিস কাকুরা খুদেদের ভালোবেসে চকোলেট নিয়ে খুদেদের কাছ থেকে কয়েনগুলি উদ্ধার করে। তেমনি বড়রাও পুলিসি চাপে কয়েন ফিরিয়ে দেন। তবে, কী শুধু মাত্র ১০৯টি কয়েন! নাকি এখানে আরও গুপ্তধন রয়েছে, তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে।


    পুলিস জানিয়েছে, কয়েনগুলি ইংরেজ আমলে তৈরি। রুপোর এক টাকার কয়েনগুলির যথেষ্ট ওজন। এছাড়াও আট আনা, চার আনা কয়েন রয়েছে। অন্য ধাতুর মুদ্রাও রয়েছে। এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়পুরে নীলকুঠি ছিল। বহু প্রাচীন জমিদার বাড়ির আদলে ভগ্নপ্রায় বাড়িরও দেখা মেলে। এলাকার কোন ধনী ব্যক্তি গোপনে মাটির নিচে সম্পদ লুকিয়ে রেখেছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়েছেন অনেকেই। 


    পুলিস জানিয়েছে, নিয়ম মেনে কয়েনগুলি উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি জেলাশাসককে লিখিত ভাবে জানানো হবে। জেলাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, পুলিসের লিখিত আর্জি পেলে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হবে। রাজ্যে হেরিটেজ কমিশন রয়েছে। আর্কিওলজিক্যাল বিভাগ রয়েছে। তাদেরও পরামর্শ নেওয়া হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


    (উদ্ধার হওয়া সোনার কয়েন এখন পুলিস হেফাজতে। নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)