জঙ্গলমহলে বাঘবন্দির রূদ্ধশ্বাস খেলা চলছেই, ট্র্যাপ ক্যামেরায় মুড়ছে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানা
বর্তমান | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: বাঘিনি জিনাতের পথ অনুসরণ করে প্রতিবেশী রাজ্য থেকে মাঝেমধ্যেই রয়্যাল বেঙ্গল বাংলায় ঢুকে পড়ছে। এরাজ্যের জঙ্গলমহলে প্রবেশের পর বাঘকে পিছু ধাওয়া করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ফলে এবার রাজ্যে ঢোকামাত্র ডোরাকাটাকে নজরবন্দি করতে জঙ্গলমহলের ঝাড়খণ্ড সীমানা ট্র্যাপ ক্যামেরায় মুড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনদপ্তর। জঙ্গলমহলের শাল, সেগুন সহ অন্যান্য গাছে লাগানো হচ্ছে ট্র্যাপ ক্যমেরা। অনেকটা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মতোই সেগুলির মাধ্যমে একটানা ভিডিও ফুটেজ মজুত করা হবে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর তা পরীক্ষা করেই বাঘের আগমনের ব্যাপারে বনদপ্তরের আধিকারিকরা নিশ্চিত হতে পারবেন।
রাজ্যের মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলান ডাইভাল বলেন, বাঘের গতিবিধি সম্পর্কে জানতে আমরা জঙ্গলমহলে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সাধারণত নির্দিষ্ট কোনও এলাকায় বাঘ সহ অন্যান্য বন্য পশুর আগমন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানোর চল রয়েছে। তবে এবার জঙ্গলমহলের ঝাড়খণ্ড সীমানায় আমরা স্থায়ীভাবে ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাঘ রাজ্যে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই যাতে আমরা অবগত হতে পারি, তারজন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাঁকুড়া দক্ষিণ বনবিভাগের এক আধিকারিক বলেন, মাঝারি গুণগত মানের প্রতি পিস ট্র্যাপ ক্যামেরার দাম ৩০-৪০ হাজার টাকা। এর আগে জঙ্গলে লাগানোর পর ওই দামি ক্যামেরা চুরির ঘটনাও ঘটেছে। ফলে জঙ্গলমহলের ঠিক কোন জায়গায় ক্যামেরা বসানো হবে, সেব্যাপারে দপ্তরের তরফে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। বনকর্মীরা ক্যামেরাগুলির উপর নজরদারিও চালাবেন।
উল্লেখ্য, এরাজ্যের জঙ্গলমহলে বহু আগে বাঘ বিচরণ করত। বসতি গড়ে ওঠায় ধীরে ধীরে রয়্যাল বেঙ্গলের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। তবে সাত বছর আগে একটি বাঘ বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামে দাপিয়ে বেড়ায়। সেটির লালগড়ে মৃত্যু হয়। সম্প্রতি ওড়িশার সিমলিপাল অভয়ারণ্যের বাঘিনি জিনাতের আগমন রাজ্যজুড়ে হইচই ফেলে দেয়। বাঁকুড়ার রানিবাঁধের গোঁসাইডির জঙ্গল থেকে জিনাতকে খাঁচাবন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
তারপর জঙ্গলমহলে ঘনঘন পুরুষ বাঘের যাতায়াত শুরু হয়েছে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গলমহলে কোনও ক্ষয়ক্ষতি না করা পর্যন্ত বাঘ ধরা হবে না বলে বনদপ্তর বার্তা দেওয়ার পর বাসিন্দাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এতদিন জঙ্গলমহলবাসী হাতি, নেকড়ে, হায়েনা, চিতার সঙ্গে ‘ঘর’ করেছেন। কিন্তু, এলাকায় রয়্যাল বেঙ্গলের ঘাঁটি গাড়ার বিষয়টি তাঁদের ভাবিয়ে তুলেছে।
বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, বাঘ বুদ্ধিমান পশুগুলির মধ্যে অন্যতম। আসলে জিনাতের আসার পথ ধরেই পুরুষ বাঘগুলি বাঁকুড়ায় আসছে। জিনাতকে খাঁচাবন্দি করে যে এখান থেকে গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা তারা বুঝতে পারছে না। ফলে জিনাত এখনও জঙ্গলমহলেই রয়ে গিয়েছে বলে পুরুষ বাঘগুলি মনে করছে।
সেই কারণে সেগুলি জঙ্গলমহলে আসার পর আর ফিরে যেতে চাইছে না বলে আমাদের অনুমান। তিনি আরও বলেন, বাঘ রাজকীয়ভাবে হরিণ বা বনশুয়োরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকার করতেই বেশি পছন্দ করে। বয়স বৃদ্ধি বা অসুস্থতার কারণে শিকার ধরতে অসমর্থ হলে বাঘ মানুষকে আক্রমণ করে। সেই কারণে শেষবার আসা বাঘটি বাঁকুড়ায় এক সপ্তাহের বেশি সময় কাটালেও মানুষ বা গবাদি পশুর উপর আক্রমণ করেনি। -নিজস্ব চিত্র