বাংলার বাড়িতে কাটমানি আদায়, অভিযুক্ত বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী
বর্তমান | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, হরিশ্চন্দ্রপুর: বাংলার বাড়ি প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকতেই মুখে হাসি ফুটেছিল দিনমজুর পরিবারের। স্বপ্ন ছিল পাকা বাড়ি হবে। মাথার উপরে ছাদ হবে। তবে সেই স্বপ্নপূরণের আশা মাঝপথে থমকে গেল। অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল কাটমানি। দিনমজুর পরিবারের কাছ থেকে প্রথম কিস্তিতে ১৫ হাজার টাকা কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠল বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য রীতা দাস বলেন, আমার স্বামী কারও কাছ থেকে কোনও টাকা নেননি। মিথ্যা অভিযোগ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা বিচ্ছু দাস। পেশায় দিনমজুর। বাংলার বাড়ি প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল। কিন্তু অভিযোগ, ওই বুথের বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য রিতা দাসের স্বামী সূর্য দাসের মোবাইলে তাদের টাকা ঢোকার মেসেজ আসে। তারপর সূর্য তাঁদের ব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়ে টাকা তুলিয়ে ১৫ হাজার টাকা কাটমানি ও ৫০০ টাকা মিষ্টি খাওয়ার নাম করে হাতিয়ে নেন। না দিলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ঢুকবে না বলে ভয় দেখান। বাধ্য হয়ে বিচ্ছু সেই টাকা দিয়ে দেন।
সূর্য দাস বলেন, আমার নামে ভিত্তিহীন অভিযোগ করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।
বিচ্ছুর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তিনি বয়সের ভারে কাজ করতে পারেন না। অভাবের সংসার। কাটমানি দেওয়ার পর অবশিষ্ট ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে কাজে নেমেছিলেন। এদিকে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঘরের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে এই ঘটনা মৌখিকভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছে ওই পরিবার।
উপভোক্তা বিচ্ছুর ছেলে সাধন দাস বলেন, অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকতেই পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী সূর্য বাড়িতে হাজির হন। এরপর বাবাকে সঙ্গে করে ব্যাঙ্কে নিয়ে যান। আমিও সঙ্গে ছিলাম। বাবার কাছ থেকে সাড়ে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে নেন। এখন টাকার অভাবে কাজ থমকে গিয়েছে।
হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির উপপ্রধান অজয় পাসওয়ান বলেন, এলাকার মানুষের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারি। টাকা নেওয়ার অভিযোগ সত্য হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
আইএনটিটিইউসি ব্লক সভাপতি সাহেব দাসের কথায়, কয়েকদিন ওই বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ শুনছি। কেউ ভয়ে মুখ খুলতে চাননি। হতদরিদ্র মানুষকে ভয় দেখিয়ে এভাবে কাটমানি আদায় করছেন তিনি।
হরিশ্চন্দ্রপুর-১ এর বিডিও সৌমেন মণ্ডল বলেন, আমাকে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। লিখিত জানালে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। প্রমাণ হলে কড়া ব্যবস্থা নেব।