ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: একদিকে অঙ্কের শিক্ষিকার সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণে মুগ্ধ পড়ুয়া থেকে অভিভাবকরা। অন্যদিকে, বাগদেবীর আরাধনায় পুরোহিতের আসনে ক্যান্সারজয়ী নারী! চিরাচরিত প্রথা ভেঙে নজির গড়ল ধূপগুড়ির পূর্ব মল্লিকপাড়া হাইস্কুল ও জলপাইগুড়ি শহরের ফণীন্দ্রদেব প্রাথমিক বিদ্যালয়। জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র কলেজে আবার বিদ্যার দেবীর বন্দনায় পৌরোহিত্য থেকে যজ্ঞ, সবটাই করলেন ইংরেজি অনার্সের ছাত্রী তনুশ্রী অধিকারী।
রবিবার ধুমধাম করে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল ধূপগুড়ি পূর্ব মল্লিকপাড়া হাইস্কুলে। ওই পুজোয় পুরোহিত ছিলেন স্কুলেরই অঙ্কের শিক্ষিকা তমা শাস্ত্রী। বাড়ি নদীয়ার রানাঘাট-২ ব্লকে। চাকরিসূত্রে এখন ধূপগুড়িতে বাস। গত ৩০ নভেম্বর স্কুলে যোগ দিয়েছেন। তখনই শাস্ত্রে তাঁর পাণ্ডিত্যের কথা জেনে প্রধান শিক্ষক অমিতকুমার দে ঠিক করেন, ওই শিক্ষিকাই এবার স্কুলে সরস্বতী পুজো করবেন। বাকি শিক্ষক শিক্ষিকাও সম্মতি জানান। প্রস্তাব পাওয়ামাত্র রাজি হয়ে যান তমা। দু’মাস ধরে নিজেকে প্রস্তুত করে এদিন পুজোয় বসেন তিনি।
অন্যদিকে, জলপাইগুড়ির ফণীন্দ্রদেব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এদিন বাগদেবীর আরাধনায় পুরোহিত হিসেবে ছিলেন শহরের নিউ টাউন পাড়ার বাসিন্দা শিখা চক্রবর্তী। বছর বিয়াল্লিশের ওই মহিলা ক্যান্সারজয়ী। এখনও অবশ্য ওষুধ চলছে। ছোট থেকেই বাবা মুকুলমোহন অধিকারীর কাছে পুজোর খুঁটিনাটি শিখেছেন। গত সাতবছর ধরে নিজে পুজো করছেন। শুধু সরস্বতী পুজো নয়, কালীপুজো এমনকী দুর্গাপুজো করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। বিয়েতেও পুরোহিত হিসেবে এখন ডাক পড়ে তাঁর। ফণীন্দ্রদেব প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও এদিন শহরের একাধিক পুজোয় মহিলা পুরোহিত হিসেবে ডাকা হয়েছিল শিখা চক্রবর্তীকে। তিনি বললেন, পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদেরও পুজোর সমান অধিকার রয়েছে। এটা প্রতিষ্ঠা করতেই একদিন মহিলা পুরোহিত হিসেবে পুজো শুরু করেছিলাম। প্রথম প্রথম কিছু মানুষ নানা কথা বলেছিল। ধীরে ধীরে সেসব বাধা কেটে গিয়েছে। আনন্দচন্দ্র কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা আবিরা সেনগুপ্ত বলেন, আমাদের কলেজের বেশ কয়েকজন এবার প্রায় একমাস ধরে পুজো করার প্রশিক্ষণ নেয়। তারমধ্যে থেকে এদিন আমরা একজনকে বেছে নিই। তিনিই মূল পৌরোহিত্য করেছেন। তাঁকে সাহায্য করেছেন বাকিরা। পুরোহিত মানেই পুরুষ, এই ধারণা ভাঙার পাশাপাশি বর্ণবাদের বিরুদ্ধেও বার্তা দিতে চেয়েছি আমরা। (শিখা চক্রবর্তী। - নিজস্ব চিত্র।)