সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে রবিবার কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে মহাসরস্বতীর পুজো করা হল। রাজআমলে শুরু হওয়া এই মহাসরস্বতীর পুজোয় বলি প্রথার প্রচলন রয়েছে। এক জোড়া পায়রা বলি দিয়ে পুজো হয় এদিন। মদনমোহন মন্দিরের পুরোহিত খগপতি মিশ্র পুজো করেন।
অন্যান্য সরস্বতী প্রতিমার সঙ্গে এখানকার প্রতিমার বেশ কিছুটা ফারাক রয়েছে। দেবী এখানে চতুর্ভূজা। দেবীর চারপাশে চারটি রাজহাঁস। এদিন সকাল থেকেই মন্দিরে পুজোর আয়োজন শুরু হয়ে যায়। সকাল ১০টায় পুজো শুরু হয়। অনেকেই মন্দিরে এসে তাঁদের সন্তানকে হাতেখড়ি দেওয়ান। মন্দিরের পক্ষ থেকে সকলকে খিচুড়ি ও বাঁধাকপি-আলু দিয়ে তৈরিসব্জি বিতরণ করা হয়।
মদনমোহন মন্দিরের কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, বরাবরই মদনমোহন মন্দিরের পুজো বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে হয়। পঞ্জিকা অনুসারে এদিন সকাল ১০টায় পুজো শুরু করা হয়। প্রথা মেনে জোড়া পায়রা বলি দিয়ে মায়ের পুজো দেওয়া হয়েছে। রাজআমলের ঐতিহ্য ও রীতিনীতি মেনেই পুজো করা হল। কোচবিহারের মদনমোহন মন্দির মানেই বারো মাসে তেরো পার্বণ। মদনমোহনের রাস উৎসব থেকে শুরু করে রথযাত্রা যেমন এখানে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হয় তেমনই কালীপুজো, জগদ্ধাত্রীপুজো সহ মহাসরস্বতীর পুজোও এখানে অত্যন্ত নিষ্ঠা নিয়ম সহকারে হয়ে থাকে। রাজশিল্পী প্রভাত চিত্রকর বড়তারা মা, মহালক্ষ্মীর প্রতিমা তৈরির মতো মহাসরস্বতীর প্রতিমা বানান। মহাসরস্বতীর পাশাপাশি এখানে ছয়ঋতুরও পুজো করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যা থেকেই কোচবিহারের বিভিন্ন স্কুল, কলেজের প্রতিমা নিয়ে আসা হয়। এদিন সকালে অনেক জায়গাতেই সরস্বতী পুজো শুরু হয়ে যায়। ফলে কোচবিহারের রাস্তাঘাট, হাটে-বাজারে ছিল বেশ ভিড়। এদিকে, সকাল থেকেই মদনমোহন মন্দিরেও বহু পুণ্যার্থী ভিড় করতে শুরু করেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই সেই ভিড় বাড়তে শুরু করে। কোচবিহার শহরে সরস্বতী পুজোয় কেউ ঘুরতে বের হবেন আর একবার মদনমোহন মন্দিরে মহাসরস্বতীর দর্শন করবেন না, তাতো হয় না! তাই এদিন রাত পর্যন্ত মন্দিরে বেশ ভিড় ছিল। অনেকেই নিজেদের স্কুল-কলেজের পুজো দেখে সেখান থেকে চলে আসেন সাগর দিঘির পারে। সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে তারপর মদনমোহন মন্দিরে এসেছেন। সন্ধ্যায় মন্দির চত্বরে আলো, আরতি, নহবতের সানাইয়ের সুর, উল্টো দিকে বৈরাগী দিঘির আলোকমালা সব মিলিয়ে বসন্তের এই পঞ্চমী তিথিতে কোচবিহার তথা মদনমোহন মন্দিরের পরিবেশ ছিল একেবারে অন্যরকম।