• বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন ‘দাপুটে স্বাস্থ্য নেতা’ এখন ভিক্ষা করেন তারাপীঠে
    বর্তমান | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • রাজু চক্রবর্তী ও সুখেন্দু পাল: কলকাতা ও বর্ধমান: বঙ্গ বিজেপির স্বাস্থ্য পরিষেবা সেলের তিনি প্রাক্তন প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক। দশবছর আগে কংগ্রেস ছেড়ে সেই ইন্দ্রজিৎ সিনহা (ওরফে বুলেট) গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন। বিজেপি এখন পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল, সেইসময় ধারেভারে ছিল বেশ দুর্বল। বিপদে-আপদে রাজ্যের প্রায় সমস্ত সরকারি হাসপাতালে বিজেপি কর্মীদের-সমর্থকদের ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেন তিনি। তৎকালীন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার হাত ধরে পার্টিতে ঢুকে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিজেপির উপস্থিতি বৃদ্ধির কাজে সেইসময় নাগাড়ে পরিশ্রম করেন ইন্দ্রজিৎবাবু। 


    পরবর্তীকালে দলের রাজ্য সভাপতি হন দিলীপ ঘোষ। তাঁর আমলে স্বাস্থ্যভবন পর্যন্ত তাঁর নাম-পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্যে স্বাস্থ্যক্ষেত্রেরই একদা সেই দাপুটে নেতা এই মুহূর্তে দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছেন। অথচ হাসপাতালে চিকিৎসা তো দূর অস্ত, তাঁর থাকা-খাওয়ারও নিশ্চয়তা নেই। অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে তিনমাস যাবৎ তারাপীঠ মহাশ্মশানে ভিক্ষাবৃত্তি করে অন্নের সংস্থান করতে হচ্ছে তাঁকে! গাছতলায় রাত কাটাতে হচ্ছে বিজেপির রাজ্য কমিটির এই প্রাক্তন আমন্ত্রিত সদস্যকে। 


    এই প্রসঙ্গে রবিবার ফোনে ইন্দ্রজিৎবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিজেপির বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি চূড়ান্ত ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, তাঁর ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার আর্জি জানাতে গিয়ে তিনি অপমানিতই হয়েছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতার কাছে। যদিও একসময় বিজেপির একাধিক রাজ্য ও কেন্দ্রের তাবড় নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন ইন্দ্রজিৎ। স্বাস্থ্যভবন ঘেরাও থেকে খড়্গপুরে বিজেপির ব্যানারে প্রথম স্বাস্থ্যমেলার আয়োজন করেন তিনি।


    এদিন আক্ষেপের সঙ্গে ইন্দ্রজিৎ বলেন, দলের জন্য একসময় ঘরের টাকাও খরচ করেছি। পার্টির কর্মী-সমর্থকদের হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়া থেকে তাঁদের জন্য সুলভে ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়ে বহু মানুষের আশীর্বাদ পেয়েছি। কিন্তু দলেরই কিছু নেতা আমাকে ইচ্ছকৃতভাবে কলঙ্কিত করার চক্রান্ত করেছিল। পার্টির কর্মসূচি আয়োজন করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই আজ নিজের চিকিৎসা, এমনকী ভরণপোষণের ব্যয়বহনেরও ক্ষমতা নেই আমার। ইন্দ্রজিতের কথায়, পার্টি এখন অনেক বড় হয়েছে, রয়েছে অনেক এমপি-এমএলএ কিন্তু আমার মতো হারিয়ে যাওয়া সামান্য কর্মীর কথা ওদের কানে পৌঁছয় না। তারাপীঠের কিছু স্থানীয় মানুষের আশ্রয়ে রয়েছি। আমার বিশ্বাস, প্রকৃতই সেবা করেছি মানুষের। তাই ভগবান শেষ পর্যন্ত আমাকে দেখবেন। 


    এই প্রসঙ্গে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, ইন্দ্রজিৎ আমাদের পার্টিতে প্রথম স্বাস্থ্য পরিষেবা সেল তৈরি করে কাজ শুরু করেন। বহু কর্মী-সমর্থক ওঁর দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। ওঁর এই অবস্থার কথা জানতাম না। তাঁর দুঃসময়ে, এই কর্মীর পাশে দলের দাঁড়ানো উচিত। 
  • Link to this news (বর্তমান)