অলকাভ নিয়োগী, বিধাননগর: ‘পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর’। কথা ছিল, দেখা হবে বিকেল ৫টায়। বইমেলার পাঁচ নম্বর গেট। প্রেমিক হাজির। চোখে রিমলেস চশমা। হাতে লাল গোলাপ। পরনে হলুদ পাঞ্জাবি। বসন্ত পঞ্চমীর সাজেই এসেছেন। কিন্তু প্রেমিকার দেখা নেই। আর তাঁকে খুঁজবেনই বা কোথায়? বইমেলা প্রাঙ্গণজুড়ে যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই হলুদ শাড়ি! ঢাকাইয়ের সংখ্যাও তো নেহাত কম নয়।
‘কোথায় আছিস তুই’? স্মার্টফোনে প্রশ্ন প্রেমিকের। অপরপ্রান্তে প্রেমিকা। কিন্তু প্রবল ভিড়ে কেউ কারও কথা শুনতে পারছেন না। তবে দেখা হল শেষমেশ। হারানো প্রেমিকার খোঁজ দিল বইমেলার অ্যাপ! গুগল লোকেশনে যখন গিয়ে পৌঁছলেন প্রেমিক, তরুণীর দু’চোখ তখন ছলছল করছে। এ যেন ‘হারানো-প্রাপ্তি’র সন্ধিক্ষণ! পঞ্চমী তিথিতে বইমেলার প্রথম রবিবারই হয়ে উঠল বসন্তময়। বাঙালির নিজস্ব ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’তে বইমেলায় হাজির লক্ষ লক্ষ পাঠক। বইয়ের সঙ্গে ফিশফ্রাই। মেলার মাঠেই প্রেমের আড্ডা। গিটারে গান। কবিতা আওড়ালেন একঝাঁক প্রেমিক। বসন্তের রঙেই রঙিন হয়ে উঠল বইমেলা প্রাঙ্গণ।
সরস্বতী পুজো বাঙালির আবেগ। পঞ্জিকায় লেখা সোমবার। তবে, রবিবার দুপুরেই পড়ে গিয়েছে তিথি। তাই অনেকে পুজো সেরে নিয়েছেন। তারপর সোজা বইমেলায়। গত পাঁচদিন ওয়েস্টার্ন পোশাকে দেখা গিয়েছিল তরুণ-তরুণীদের। কিন্তু এদিন গোটা প্রাঙ্গণ ছিল শাড়ি ও পাঞ্জাবিময়। বসন্ত পঞ্চমী। তাই রংও নির্দিষ্ট, হলুদ। গেট খুলতেই শুরু হয়েছিল ভিড়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই জনপ্লাবন। প্রথম রবিবারে হাজির ৪ লক্ষ মানুষ! বেশিরভাগই তরুণ প্রজন্মের। শুধু প্রেম নয়, তাঁরা স্টল ঘুরলেন। বইও কিনলেন। তারপর আড্ডা দিলেন জমিয়ে। রিং রোডে দাঁড়িয়ে রবি ঠাকুরের কবিতা পাঠ করছেন এক তরুণ—‘ঘরেতে এল না সে তো, মনে তার নিত্য আসা যাওয়া...’।
ফুড প্যাভিলিয়নের সামনে পা রাখা দায়। যে ক’টা চেয়ার পাতা, তাতে বসতে গেলে ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ খেলতে হবে। বান্ধবীকে সেখানেই নিয়ে এসেছেন এক তরুণ। তরুণী খেতে চেয়েছেন ফিশফ্রাই আর কাবাব। ‘দাদা, আপনাদের আসল ভেটকি তো?’ তরুণকে ঠেলে সরিয়ে পিছন থেকে জিজ্ঞেস করলেন এক প্রৌঢ়। ঝগড়া করেননি। তবে, প্রৌঢ়কে ব্যঙ্গ করেই তরুণ বলে উঠলেন, ‘আমাকে নকল ভেটকি দেবেন দাদা!’ মেলার ঢেউ উপচে পড়েছিল বাইরেও। করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ডেও যেন উৎসবের আমেজ। সেখানেও তরুণ প্রজন্মের ভিড়ই বেশি। চায়ের আড্ডা। এক তরুণের কথায়, ভিতরে চায়ের দাম এয়ারপোর্টের মতো! তাই বাইরে খাচ্ছি। ৫ টাকায় স্বস্তির চুমুক। আর ভিড় এড়িয়ে একটু শ্বাস নিচ্ছি বুক ভরে।
গিল্ড অফিসের সামনে বেশ ভিড়। সামনে বইমেলার সেলফিজোন। তারই পাশে ইতঃস্তত করছেন এক যুগল। তরুণের হাতে বড় সাইজের ফুলের তোড়া। আজ বইমেলাতেই বান্ধবীকে প্রপোজ করবেন। তরুণী লজ্জায় লাল। আস্তে করে বলছেন, ‘কী করছো? লোকে দেখে হাসবে।’ তরুণ অবশ্য নাছোড়বান্দা। তিনি তো ভিড়ই খুঁজছেন। হাঁটু মুড়ে বসবেন প্রেমিকার সামনে। তাঁদের দেখে ভিড় বাড়তেই তরুণী দ্রুত সরে গেলেন। ‘আরে দাঁড়া!’ ফুলের তোড়া হাতে পিছন পিছন দৌড় প্রেমিকপ্রবরের।