রনি চৌধুরী, ধূপগুড়ি
রুকসানা, রেহান, লাইলি, হিয়া, আহান, জিয়ানস, প্রিয়াংশু। স্নান সেরে নতুন জামাকাপড় পরে এই খুদেরা হাতজোড় করে বসে পড়েছে দেবী সরস্বতীর সামনে। একটু পরেই শুরু হবে গণহাতেখড়ি। হাতেখড়ি জিনিসটা ঠিক কী, সেটা বোঝার বয়স তাদের হয়নি। কিন্তু এত মানুষ, হইচই দেখে সবার আনন্দ আর ধরে না। একটু দূরে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের এই আনন্দযজ্ঞে সামিল তাদের মা–বাবারাও।
পোশাক থেকেই পরিষ্কার, সবাই একই ধর্মের নন। কিন্তু ধর্মের তথাকথিত বেড়াজাল ভেঙে সবাই সন্তানদের শিক্ষাঙ্গণে প্রবেশের জন্য সরস্বতী পুজোর দিনটিকেই বেছে নিলেন। অন্য সব খুদেদের সঙ্গে হাতেখড়ি হলো হিয়া পারভিন, আহান কবীর, লাভলি জিয়ানসদের। এ ভাবেই রবিবার বাগদেবীর আরাধনার দিন ধূপগুড়ি প্রেস ক্লাবে ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’ ধ্বনিত হলো।
এ দিন দেবী সরস্বতীর সামনে প্রতিমার সামনে রীতিমতো মন্ত্র উচ্চারণ করে হাতেখড়ি দিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৩৫ জন শিশু। সম্প্রীতির এই ছবি দেখে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত প্রশাসনিক কর্তারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এই স্লোগান যথেষ্ট জনপ্রিয় হলেও সাম্প্রদায়িক শিকড় পুরোপুরি উপড়ে ফেলা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে প্রতিবেশী বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এদেশের বহু মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এই আবহে এ দিনের গণহাতেখড়ি অনুষ্ঠান সম্প্রীতির বার্তা বহন করল। রবিবার শতাধিক খুদের হাতেখড়ি অনুষ্ঠান হয়। তাদের প্রত্যেকের হাতে পড়াশোনার সামগ্রী তুলে দেয় জলপাইগুড়ি প্রেস ক্লাব।
হাতেখড়ি দেওয়া লাভলি পারভিনের অভিভাবক বলেন, ‘আমার যেখানে বাস করি সেখানে চারপাশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বাস। আমাদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই, মিলেমিশে থাকি। সেই কারণেই আমি হাতেখড়ি দিতে মেয়েকে নিয়ে এসেছি।’ আরেক অভিভাবক জনার্দন রায় বলেন, ‘জলপাইগুড়ি জেলার কালচারই আলাদা। আমরা ইদে মুসলিম বন্ধুর বাড়িতে সেমুই–পোলাও খেতে যাই। তেমনি ওঁরাও আমাদের অনুষ্ঠানে আসেন। সরস্বতীকে বিদ্যার দেবী হিসেবেই সবাই মানেন। তাই হাতেখড়ি অনুষ্ঠানে অনেক সংখ্যালঘু মহিলা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে এসেছিলেন।’
জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি সীমা চৌধুরী বলেন, ‘প্রেস ক্লাব যে ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসার ঊর্ধ্বে। গণ হাতেখড়ি সব দিক থেকেই ব্যাতিক্রম।’ ধূপগুড়ি মহকুমা শাসক পুস্পা দোলমা লেপচা বলেন, ‘সম্প্রীতির ছবি ফুটে উঠেছে এই গণহাতেখড়ি অনুষ্ঠানে। আমরা এটাই চাই, সকলে মিলেমিশে থাকুক। আমাদের রাজ্যের কালচার কৃষ্টি সংস্কৃতি এটাই।’ জলপাইগুড়ি পুলিশ সুপার খন্ডবাহালে উমেশ গণপতও অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন।