এই সময়, রায়গঞ্জ: দেওয়ালের কান থাকুক বা না থাকুক, দেওয়াল যে কথা বলে তারই প্রমান দেয় রায়গঞ্জ শহর। কলকাতা শহরের ভাইরাল আবল–তাবল পাড়া বা বড়দিনের সাজানো পার্কস্ট্রিট তো সকলের চেনা। তবে রায়গঞ্জ শহরের ইন্সটিটিউট পার্কের এক একটি দেওয়াল যেন এক একটা ক্যানভাস। তাতে সুন্দর সব গ্রাফিটি এঁকে সেগুলিকে জীবন্ত করে তুলেছে ‘আমরা সবাই’ পরিবার। দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে সরস্বতী পূজোকে ঘিরে শুধু পুজোই নয়, সেই সঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করে এই প্রতিস্থান।
রায়গঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই রায়গঞ্জ ইন্সটিটিউট। তার মাঠেই ‘আমরা সবাই’ তাদের ৩১তম সারস্বত উৎসবের আয়োজন করেছে। মাঠের পাশেই সদর রাস্তার উপর বিরাট মণ্ডপ, সামিয়ানা। সামনে অত্যাধুনিক স্টেজ। জানা গিয়েছে, আগামী তিন দিন ধরে সেখানে স্থানীয়দের পাশাপাশি কোলকাতা ও মুম্বই থেকে শিল্পীরা এসে অনুষ্ঠান করবেন। এই ছবির সঙ্গে হয়তো অন্য যে কোনও বিগ বাজেটের পুজোর মিল পাওয়া যাবে। কিন্তু চোখ টেনে নেবে ব্যতিক্রমী সেই সব দেওয়াল।
পার্কের ভিতরের ধবধবে সাদা রঙ করা প্রাচীরকে ক্যানভাস বানিয়ে একদল নব প্রজন্ম বিভিন্ন ছবি এঁকে চলেছে একমনে। এক দিকে যখন, সাউন্ড টেস্টিং–এ হ্যালো ওয়ান টু থ্রি..আর মঞ্চ সাজানোর চূড়ান্ত প্রস্তুতি। সঙ্গে পুজোর তোড়জোড়। অন্য দিকে তখন, সেই ছেলে মেয়েরা তুলির টানে দেওয়ালে ফুটিয়ে তুলছে আফ্রিকার পটভূমি। মোনালিসা সরকার নামের এক শিল্পীর কথায়, ‘গত ৬–৭ বছর ধরে সরস্বতী পুজোর দিন আমি এখানে দেওয়াল অঙ্কনের দায়িত্বে থাকি। প্রত্যেক বছর এই সব গ্রাফিটির একটা করে থিম বাছা হয়। এই বারের থিমে রয়েছে আফ্রিকার এক উপজাতির জীবনযাত্রা। নাম রাখা হয়েছে ‘টিংগা টিংগা’।
সে আরও বলে, ‘অনেক সংস্থাই এই ধরনের উদ্যোগ নেয় ঠিকই। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে সেগুলির আর যত্ন নেয় না। দেখে খারাপ লাগে। কিন্তু আমাদের ব্যাপারটা আলাদা। সারাবছর এই কাজগুলোর যত্ন নেওয়া হয়। তাই এখানে আঁকার মজাই আলাদা।’
‘আমরা সবাই’ পুজো কমিটির সভাপতি বীরেন্দ্র সাহা বললেন, ‘রায়গঞ্জ ইন্সটিটিউট চত্বরে আমরা বন্ধুরা প্রায় ৩৫ বছর ধরে আড্ডা দিই। হঠাৎ করেই সরস্বতী পুজোর প্ল্যান করা হয়। সেই থেকে শুরু। প্রথমে ইট দিয়ে ব্লক বানিয়ে তার উপর ঠাকুর রেখে পুজো করতাম। ধীরে ধীরে এই পুজো কলেবরে বাড়তে থাকে। প্রথমে একদিন অনুষ্ঠান হতো। তার পর থেকে সেটির দিনও বাড়তে থাকে। এখন আমাদের তিন দিনের প্রোগ্রাম।’ এনমকী, পুজোর ফান্ড থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা–সহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ সারা বছরই চলতে থাকে বলে জানালেন তিনি। নয় নয় করে এই পরিবারে এখন প্রায় দেড়শো সদস্য।
সরস্বতী পুজোকে ঘিরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। শিক্ষাক্ষেত্র–সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিদের সন্মান দেয় এই সংস্থা। প্রতি বছর বিদ্যুৎ দপ্তরের লাইনম্যান, সাফাই কর্মী ও দমকল কর্মীদেরকেও সন্মান দেন তারা। সভাপতি আরও বলেন, ‘এই ওয়াল গ্রাফিটির মাধ্যমে এলাকা পরিস্কার রাখার পাশাপাশি থিম অনুযায়ী মানুষকে একটা করে সচেতনতার বার্তাও দেওয়া হয়।’