• বন্যা রোধে বিহারে কোশী প্রকল্প, তবে কেন রাজ্যে ব্রাত্য দামোদর?
    এই সময় | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সঞ্জয় দে ■ দুর্গাপুর

    বন্যা রোধে বিহারে কোশী–মেচি সংযুক্তিকরণ প্রকল্প বাজেটে ঘোষিত হতেই আলোচনায় উঠে এসেছে এ রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম প্রধান নদী দামোদরের কথা। প্রতি বছর দামোদরের জলে প্লাবিত হয় দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। বিপুল ক্ষয়ক্ষতি, গৃহহীন মানুষের অসহায়তা সংবাদ শিরোনামে জায়গা করে নেয়।

    রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে বার বার তাঁর ক্ষোভের কথা জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু কিছুই গুরুত্ব পায়নি কেন্দ্রের দরবারে। এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটে বিহারের বন্যা পরিস্থিতি রোধে কোশী সংযুক্তিকরণে অর্থমন্ত্রীর ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণায় প্রশ্ন উঠেছে, ‘এক যাত্রায় কেন পৃথক ফল’?

    কেন বাংলার ক্ষেত্রে এই বৈষম্য? বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচের কাজে কোশী নদীর সঙ্গে মহানন্দার উপনদী মেচির সংযুক্তকরণের দাবি দীর্ঘ দিনের। এ বারের বাজেটে জানানো হয়েছে, দুই নদীর সংযুক্তকরণে কাটা হবে ১১৭.৫০ কিমি খাল। সংযুক্তকরণের কাজ সম্পূর্ণ হলে কোশী নদীর ছাপিয়ে যাওয়া জল ক্যানাল ধরে চলে যাবে মেচিতে। বন্যা থেকে মুক্তি পাবে উত্তর বিহার।

    একই চিত্র দামোদরেও। বছরের পর বছর বর্ষায় ডিভিসির পাঞ্চেত ও মাইথন জলাধারের ছাড়া জলে প্লাবিত হয় নিম্ন দামোদর অববাহিকা। প্লাবিত হয়, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, হুগলির বিশাল এলাকা। ২০২৪–এও দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা জলে ভেসে গিয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুর্গাপুর ব্যারাজে এসে দামোদরের ভয়ঙ্কর রূপ দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ডিভিসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, ‘রাজ্যটাকে ডুবিয়ে ছাড়বে।’ কার্যত একটা সময়ে ডিভিসি আর ঝাড়খণ্ড সরকারের সঙ্গে রীতিমতো পত্রযুদ্ধ শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গের। তাতে সাময়িক ভাবে মাইথন থেকে জল ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করেছিল ডিভিসি।

    কিন্তু, বিশেষজ্ঞদের মতে, সাময়িক ভাবে এই সমস্যা মেটার নয়। দক্ষিণবঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে দামোদরে ড্রেজিং একমাত্র রাস্তা। মাইথন থেকে দুর্গাপুর ব্যারাজ পর্যন্ত এলাকায় দামোদরের উপরে তৈরি হয়েছে ৬টি দ্বীপ। এ ছাড়া ১০৬টি জায়গায় ছোট ও মাঝারি মাপের পাথর, মাটির স্তর জমেছে। ফলে প্রায় ৫২ শতাংশ জলধারণ ক্ষমতা কমেছে দামোদরের। নদীতে সমীক্ষা চালিয়ে গত বছরই এই রিপোর্ট দিয়েছে পুনের সেন্ট্রাল ওয়াটার অ্যান্ড রিসার্চ স্টেশন। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের মন্ত্রী থাকাকালীন দুর্গাপুর ব্যারাজ পরিদর্শনে এসে উমা ভারতী জানিয়েছিলেন, নমামী গঙ্গে অনুকরণে দামোদর অ্যাকশন প্ল্যানে নদী সংস্কার হবে। তার পর থেকে একাধিক বাজেট পেশ করেছে কেন্দ্র কিন্তু, শিকে ছেঁড়েনি দামোদরের ভাগ্যে।

    এ প্রসঙ্গে রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘এটা বিহারের বাজেট, রাজনীতির বাজেট হয়েছে। বিহারে বন্যা মোকাবিলায় ১১ হাজার কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ করেছেন অর্থমন্ত্রী। অথচ আমাদের রাজ্যে বন্যা মোকাবিলা বা নদীবাঁধ মেরামতের জন্য একটি টাকাও বরাদ্দ করেননি উনি। রাজ্য নিজে টাকা খরচ করে কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার কেন্দ্রের কাছে দামোদর সমেত রাজ্যের বিভিন্ন নদীবাঁধ সংস্কারের কথা বলেছেন। কেন্দ্রের কোনও সাড়া মেলেনি।’ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বর্ধমান–দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদ। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রের মোদী সরকার রাজনীতি করছে। এই রাজ্যে জিততে পারছে না বিজেপি। তাই রাজ্যকে সব দিক থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী হামেশা এক্সট্রা টু এ বি বলেন। এ ফর অন্ধপ্রদেশ আর বি ফর বিহার। দুই রাজ্যকে ঢেলে অর্থ দিচ্ছেন। সুযোগ পেলে সংসদে নদী সংস্কারের প্রসঙ্গ তুলব।’

  • Link to this news (এই সময়)