দিব্যেন্দু সিনহা, জলপাইগুড়ি
সম্প্রতি আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে জলপাইগুড়ি বন দপ্তর। প্রতি বছর শুখা মরসুমে বনাঞ্চলে আগুন লাগার ঘটনা সামনে আসে। আর এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কালঘাম ছোটে বন দপ্তরের। বনাঞ্চলে আগুনের খবর দ্রুত জানতে এবার আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিতে চলেছে জেলা বন দপ্তর।
এর মধ্যে রয়েছে রিয়েল টাইম অ্যালার্ট সিস্টেম, পাশাপাশি ফায়ার ওয়াচার নিয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার ব্লোইং মেশিন আনা হয়েছে। বনকর্তাদের বক্তব্য, জঙ্গলে আগুন লাগার পর প্রাকৃতিক ভাবে জঙ্গল তার আগের জায়গায় ফিরলেও ক্ষতি মুখে পড়ে বন্যপ্রাণ। তাই এবার প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ–এপ্রিল মাস পর্যন্ত বনাঞ্চলে আগুন লাগার ঘটনা সামনে আসে। জলপাইগুড়ি জেলার চাপড়ামারি বনাঞ্চল ছাড়াও গোরুমারার জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাওয়া চালসা-লাটাগুড়ি জাতীয় সড়কের পাশের থাকা জঙ্গলে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বন কর্তাদের বক্তব্য, এই জাতীয় সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় কিছু মানুষ বিড়ি–সিগারেটের অবশিষ্টাংশ জঙ্গলে ফেলে দেন। সেখান থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি এলাকায় অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে ধরে জরিমানাও করা হয়েছে।
তবে আগাম আগুন লাগার খবর পেতে এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর জন্য এলাকা চিহ্নিত করে ফায়ার ওয়াচার নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে ১০ জন যুবক জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি চালাবে। আগুন লাগার ঘটনা চোখে পড়লেই তাঁরা দপ্তরকে রিপোর্ট করবেন।
জলপাইগুড়ি জেলা বন দপ্তরের বন্যপ্রাণ বিভাগের বনাধিকারিক দ্বিজপ্রতিম সেন বলেন, ‘গত বছর গোরুমারার কিছু এলাকায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। তাই আগুন লাগার খবর দ্রুত পাওয়ার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি রিয়েল টাইম অ্যালার্ট সিস্টেমের সাহায্য নেওয়া হবে। এই সিস্টেম স্যাটেলাইটের মাধমে কাজ করে। জঙ্গলের কোথাও আগুন লাগলে তার তাপ এই সিস্টেমের মাধ্যমে স্যাটেলাইটে ধরা পড়বে। সেখান থেকে তা চলে আসবে বন দপ্তরের অ্যাপে।’
এই ব্যবস্থার সুবিধা নিতে রিয়েল টাইম অ্যালার্ট সিস্টেমের রেঞ্জ অফিসারদের যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া কোথাও আগুন লাগলে সেই জায়গা থেকে কয়েক ফুট এলাকায় জঙ্গল আগে থেকেই কেটে ফায়ার লাইন তৈরি করা হবে, যাতে আগুন ছড়াতে না পারে। যদিও আগুন লাগার আগাম খবর পাওয়া এবং দ্রুত ঘটনা স্থলে পৌঁছনোর উপরেই বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান বনাধিকারিক।