‘টিভিতে শার্লক হোমস দেখে ফেলুদা মুগ্ধ’— এমনই একটা লাইন দিয়ে দিয়ে শুরু হয়েছিল ‘অপ্সরা থিয়েটারের মামলা’ গল্পটা। সেই গল্প লেখার পর্ব যখন চলছে, সেই সময়ে অর্থাৎ গত শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি বিবিসি ও গ্রানাডা টেলিভিশনের উদ্যোগে শার্লক হোমসের বিভিন্ন কাহিনি অবলম্বনে তৈরি ৪৩টি এপিসোড দূরদর্শনে সম্প্রচারিত হয়েছিল। শার্লক হোমসের ভূমিকায় জেরেমি ব্রেটকে দেখে ফেলুদার মন্তব্য ছিল, ‘একেবারে বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছেন হোমস।’ বোঝাই যায়, ফেলুদার ওই জবানি আসলে তাঁর স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়েরই মনের কথা।
তার পরের প্রায় চার দশকে টেমস আর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। হলিউডে তো বটেই, এমনকী হোমসের জন্মস্থান ইংল্যান্ডেও তাঁকে নিয়ে নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করে বানানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকের সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজ়। বাদ নেই আগাথা ক্রিস্টির এরক্যুল পোয়ারোও। বিলেতে যেমন হোমস এবং পোয়ারো, বাঙালিদের কাছে তেমনই ব্যোমকেশ এবং ফেলুদা। এই দুই গোয়েন্দাকে নিয়ে বাঙালির আবেগের শেষ নেই। তবে কি বাংলায় ডিটেকটিভ বা থ্রিলার ছবি তৈরি করতে গেলে ওঁরা ছাড়া গতি নেই? অন্য কোনও গোয়েন্দা বাংলার মাটিতে কেন তেমন কলকে পান না? এমনই আকর্ষক বিষয় নিয়ে আড্ডা জমেছিল রবিবার। কলকাতা বইমেলার ১৯০ নম্বর স্টল অর্থাৎ ‘এই সময়’–এর স্টলে।
বইমেলায় ‘এই সময়’–এর স্টলে এমনই জমাটি আলোচনায় যোগ দিতে এসেছিলেন নতুন প্রজন্মের দুই পরিচালক মৈনাক ভৌমিক ও প্রতিম ডি গুপ্ত। ঘটনাচক্রে দু’জনেরই সাম্প্রতিকতম দু’টি ছবি, মৈনাকের ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’ ও প্রতিমের ‘চালচিত্র’, থ্রিলার গোত্রীয়। এই দুই ছবির কোনওটিতেই ‘পুরোনো’ এবং ‘নামকরা’ কোনও গোয়েন্দা নেই। বাংলার দর্শক কেন প্রথাগত গোয়েন্দাদের বাইরে অন্য কিছু বেছে নিতে পারেন না? ১৯৩৯ থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ইংরেজিতে ‘নোয়ার ফিল্ম’ নামে যে বিশেষ ঘরানার ছবি হয়েছিল, বাংলায় কেন সেই ঘরানা তৈরি হতে পারল না? উত্তরে প্রতিম ও মৈনাক দু’জনইবলছেন, ‘সম্ভবত ফেলুদা বা ব্যোমকেশকে নিয়ে নস্টালজিয়া থেকে বাঙালি বেরোতে পারে না। তাই, এঁদের নিয়ে কোনও গবেষণাও সহ্য করতে পারে না এবং এঁদের বাইরে বেরোতেও পারে না।’
গবেষণা সহ্য করতে না–পারলেও ফেলুদা বা ব্যোমকেশের নতুন ছবি এবং এই দু’জনের ভূমিকায় নতুন কোনও অভিনেতা এলে অন্তত হলে ভিড় হয়। তা সে ছবি দেখার পর যতই সমালোচনা হোক না কেন। কিন্তু অনামী কোনও গোয়েন্দা বাজারে এলে তাঁর ছবি যেন কেউ দেখতেই যেতে চান না। সে জন্যই তরুণ পরিচালকদের একাংশ নতুন কিছু করার সাহস পান না অনেক ক্ষেত্রেই। আলোচনার মঞ্চ থেকেই দুই পরিচালক দর্শকদের অনুরোধ করেছেন, অন্তত একটা ছবি ভালো হলে পরের কয়েকটা ছবি যদি তাঁরা দেখেন, তা হলে বাংলাতেও তৈরি হবে ভালো ভালো ছবি। না–হলে ‘ধুর, বাংলা ছবি আর দেখি না’ মানসিকতাই শেষ পর্যন্ত জিতে যাবে।