হেমাভ সেনগুপ্ত ■ লাভপুর
ও পার বাংলা থেকে ফ্লাইটে মায়ের সঙ্গে এসেছিল ছোট্ট স্বপ্নদর্শী। উপনিষদের মন্ত্র, রবীন্দ্রনাথ, তারাশঙ্করের স্মৃতিকে অবলম্বন করে লাভপুরের নাট্যগ্রামে তার মুখে ভাত তুলে দিলেন মামা প্রবীরকুমার সরকার। খুদে স্বপ্নদর্শীকে ভাত খাওয়ালেন পদ্মশ্রী সম্মানপ্রাপ্ত শিল্পী রতন কাহার, বঙ্গশ্রী কার্তিক দাস বাউলরাও। সব মিলিয়ে এক অন্নপ্রাশনই হয়ে উঠেছিল যেন দুই বাংলার মিলনক্ষেত্র।
স্বপ্নদর্শীর বাবা কৃষ্ণেন্দু বেরা পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা৷ পেশায় ব্যবসায়ী, নেশায় সাংস্কৃতিক কর্মী। মা শিপ্রারানি সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক। কর্মসূত্রে তিনি ঢাকায় থাকেন। আড়াই বছর আগে বিয়ে হয় কৃষ্ণেন্দু–শিপ্রার। তাঁদের একমাত্র সন্তান স্বপ্নদর্শীর বয়স এখন ৯ মাস। তার জন্ম শিলিগুড়িতে হলেও মায়ের সঙ্গে ঢাকাতেই থাকে সে। স্বপ্নদর্শীর মামা প্রবীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কর্মসচিব। বাংলাদেশের অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সদ্য পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছে তাঁকে।
তার পর থেকে চিকিৎসা ভিসা নিয়ে ভারতে রয়েছেন। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল দুই পরিবারেই। তাই এ পারেই অন্নপ্রাশন করার কথা ভাবা হয়। বাবা সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে লাভপুরের নাট্যদলের কর্ণধার উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেন। সেই মতো ছোট্ট স্বপ্নদর্শীর অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান হলো বীরভূমের লাভপুরের নাট্যকর্মী উজ্বল মুখোপাধ্যায়ের ‘গুরুকুল নাট্য আশ্রমে’, যা কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মভূমিতে।
অনুষ্ঠানের আয়োজনে বেশ অভিনবত্ব ছিল। উপনিষদ থেকে মন্ত্রপাঠ হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ করে হয় অনুষ্ঠান। দুই দেশের ৯টি নদীর জল ও মাটিতে বকুলগাছ রোপণ করে মিলনের বার্তা দেওয়া হয়। দুই বাংলার সংস্কৃতিকে মান্যতা দিয়ে পুকুরে মাছ ছাড়া হয়, লাঙল দিয়ে চাষও দেওয়া হয় জমিতে। আকাশে ওড়ানো হয় পাঁচটি পায়রা।
এ দিনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে স্বপ্নদর্শীকে পায়েস খাওয়ালেন, ‘বড় লোকের বিটি লো' গানের স্রষ্টা পদ্ম সম্মানপ্রাপ্ত শিল্পী রতন কাহার, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিকিৎসক হিসাবে পরিচিত বিশু ডাক্তার ওরফে সুকুমার চন্দ্র, 'বঙ্গবিভূষণ’ কার্তিক দাস বাউল, বোলপুর ভারত সেবাশ্রমের শান্তি মহারাজ প্রমুখ৷
স্বপ্নদর্শীর বাবা কৃষ্ণেন্দু বেরা ও মা শিপ্রারানি সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন অস্থির পরিস্থিতি। তাতে আত্মীয়–পরিজনদের পাওয়া যাবে না৷ ভিসার সমস্যা আছে৷ খুব কষ্ট করে ভিসা পেতে হয়েছে। বাড়িতে আয়োজন করলে এমন সুন্দর পরিবেশ, এত গুণীজনকে এক সঙ্গে কোথাও পেতাম না।’ গুরুকুল নাট্য–আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা নাট্যকার উজ্বল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ঢাকাতেই এই অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে দেশের পরিস্থিতির কারণে এখানে আয়োজন করার পরিকল্পনা হয়।’