ক্যাম্পাসে ব্রাত্যকে ঘিরে বিক্ষোভ, শুভেন্দুর বাংলাদেশ খোঁচা, কেমন হল যোগেশচন্দ্রের সরস্বতী পুজো?
আজ তক | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
রবিবার যোগেশচন্দ্র কলেজের সরস্বতী পুজো দেখতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও সাংসদ মালা রায়কে ৷ কলেজে এক বহিরাগত ব্যক্তি ছাত্রীদের ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়ে বিচারের দাবিতে সরব হন পড়ুয়ারা ৷ ওঠে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান। কলেজে বহিরাগতদের প্রবেশ রুখতে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন ছাত্রছাত্রীরা। পরে কলেজের একটি ঘরে পড়ুয়াদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকও করেন শিক্ষামন্ত্রী। বিক্ষোভরত ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন ব্রাত্য বসু ৷
রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল কলেজের সরস্বতীপুজোয় অংশ নিতে এসেছিলেন ব্রাত্য বসু ও মালা রায়। বৈঠক শেষে সরস্বতীপুজোর প্রতিমা দর্শন করেই কলেজ চত্বর ছাড়েন শিক্ষামন্ত্রী। পুলিশি তত্ত্বাবধানে কলেজের সরস্বতীপুজো কিংবা পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে কী কী দাবি পেশ করা হয়েছে, সে বিষয় খোলসা করেননি পড়ুয়ারাও। তবে সূত্রের খবর, কলেজে সুষ্ঠু পঠন-পাঠনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বহিরাগতদের প্রবেশ রোখার আবেদন জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। প্রাক্তন ছাত্রদের একাংশ যে এখনও কলেজ ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, সেই অভিযোগও শিক্ষামন্ত্রীর কানে তোলা হয়েছে। শিক্ষা দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ করবেন শিক্ষামন্ত্রী। পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী এবিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ৷
ল কলেজের ছাত্রীরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর জানিয়েছেন, "আমরা সবকিছুই শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছি ৷ তিনি এ বিষয়ে অবগত আছেন এবং ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন ৷" রবিবার যোগেশচন্দ্র কলেজে পৌঁছে মন্ত্রী বললেন, “সব ঠিক আছে, কোনও সমস্যা নেই। কোর্টের নির্দেশে পুজো হচ্ছে। প্রন্সিপাল নিজে আছেন। গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট মালা রায় আছেন। আমরা পুজো দেখব বেরিয়ে যাব। সমস্যা নেই!” ব্রাত্য যখন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন তখন গোটা ক্যাম্পাস কার্যত স্লোগানে স্লোগানে মুখর। যদিও কিছু সময়ের মধ্যেই আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের খোঁচা দিয়ে ব্রাত্য বসু বলেন, “ওরা তো কথা বলতে চাইছে না। শুধু মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে। ভাল করে ছবি দেখান।” মালা রায়কে পাশে নিয়ে খানিক ক্ষোভের সুরেই ব্রাত্য বসু বলতে থাকেন, “ওরা তো চেঁচাচ্ছে! কথা বলতে চাইলে বলব। আজকে পুজোর দিন, দাবি-দাওয়ার দিন নয়। দাবি থাকলে প্রিন্সিপালকে জানাক। আমরা সমাধান করব। কিন্তু, ওরা তো কথা বলতে চাইছে না। শুধু মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে।” যদিও এরপরে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথাও বলেন ব্রাত্য।
এদিকে যোগেশচন্দ্র কলেজের ঘটনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, 'এটাও বাংলাদেশ বানিয়ে দিয়েছে। ওপারের যশোরে, সেখানেও পুলিশ দিয়ে আর্মি দিয়ে পুজো হচ্ছে। আর এপারেও কলকাতাতে পুলিশ দিয়ে পুজো হচ্ছে। তাও হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে।'
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরেই বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের কলেজ যোগেশচন্দ্র কলেজ । পুজো করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে । অভিযোগ, ল কলেজের পড়ুয়ারা যেখানে পুজো করতে চেয়েছিলেন সেই জায়গা ডে কলেজের ছাত্ররা দখল করেছেন । প্রসঙ্গত, যোগেশ চন্দ্র ডে কলেজ ও যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী ল কলেজের ক্যাম্পাস একটাই । ডে কলেজের পড়ুয়ারা দাবি করেন, পুজোর জায়গায় অস্থায়ী নির্মাণ তৈরি করেছেন বহিরাগতরা । তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ৷ অবশেষে পুলিশের উপস্থিতিতে পুজোর অনুমতি দেয় কলকাতা হাইকোর্ট । এমনকী কলেজ চত্বরে যাতে বহিরাগত প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । পাশাপাশি, যে অস্থায়ী নির্মাণ নিয়ে বিতর্ক, সেটিকেও ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত।