• সেলফি, ব্যঙ্গ-বিতর্কে জমজমাট প্রথম দিন
    এই সময় | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও কাঁথি: পড়াশোনায় মেদিনীপুর বরাবর এগিয়ে। এটা নিয়ে অন্য জেলার ছেলেমেয়েরা হয়তো কিঞ্চিৎ অসূয়া বোধ করতে পারে। কিন্তু এর মধ্যে বাস্তবতা যে রয়েছে, তাও অস্বীকার করার উপায় থাকে না বিভিন্ন সরকারি স্তরের বিভিন্ন পরীক্ষার ফলে। তবে আরও একটি যে বিষয়ে দুই মেদিনীপুর বিভিন্ন জেলার মধ্যে অন্যতম অগ্রপথিক, তা হল সরস্বতী পুজোর আয়োজন। শোনা যায়, এই দুই জেলায় সরস্বতীপুজোই প্রধান উৎসব। এমনকী, দুর্গাপুজোকেও ছাড়িয়ে যায় সরস্বতীপুজোর জাঁকজমক। কোথাও থিমের পুজো, কোথাও বড়মাপের প্রতিমার পুজো।

    এ বার দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে অল্প কিছু জায়গায় বাগদেবীর আরাধনা হলেও, মূলত আজ, সোমবারই বেশির ভাগ পুজোর আয়োজন হচ্ছে। সে স্কুল হোক বা ক্লাবের পুজো। তবে রবিবার তেমন কোথাও মাতামাতি না দেখা গেলেও, দুপুরের পুজোর শেষে সন্ধেয় বিভিন্ন এলাকায় মণ্ডপে হালকা ভিড় দেখা গিয়েছে তিন জেলাতেই। অনেক জায়গাতেই মণ্ডপের সামনে উৎসাহী ছেলেমেয়েদের সেলফি তুলতে ব্যস্ত দেখা গিয়েছে। সামলাতে না–পারা শাড়ি পরে রাস্তাতেও ছিল কচিকাঁচা পড়ুয়াদের।

    এ দিন সকালে ঝাড়গ্রাম শহরের নৃপেনপল্লিতে একটি ক্লাবে কচিকাঁচাদের সঙ্গে ফিতে কেটে পুজোর উদ্বোধন করেন রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। তবে আজ, সোমবার দিনভর মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় উপচে পড়বে। এ বার তিন জেলাতেই থিমের বেশ রমরমা। বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের থিম। তবে বেশির ভাগ মণ্ডপেই দেখা যাচ্ছে, থিমের উপজীব্য রাজনৈতিক বিষয়। তাতে যেমন রয়েছে সরল হাস্যরস, তেমনই শ্লেষেরও অভাব নেই। এ ধরনের রাজনৈতিক বিষয় ধরে ব্যঙ্গচিত্রের ট্রেন্ড মেদিনীপুরের সরস্বতীপুজোয় শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। তার আগে তিন জেলারই সাধারণ মানুষ ও প্রবীণদের অভিযোগ ছিল, মণ্ডপে মণ্ডপে শুধু তারস্বরে মাইক বাজত। সেই দাপট কিছুটা হলেও কমেছে, তার জায়গা নিয়েছে থিমের পুজো।

    এ বার বিভিন্ন মণ্ডপে ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সাম্প্রতিক নানা ঘটনাবলি। এই তালিকায় এসেছে স্যালাইন বিতর্কে প্রসূতি মৃত্যু থেকে মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু, আরজি কর কাণ্ড থেকে সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে ওঠা বিতর্কিত ঘটনা। থিমের তালিকায় ঢুকেছে কলকাতায় হেলে পড়া বহুতলের হেলে পড়ার ঘটনা থেকে সদ্য পেশ হওয়া কেন্দ্রীয় বাজেটও। তবে অন্য থিমও রয়েছে। ঝাড়গ্রাম রানি বিনোদমঞ্জরী রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজোয় এ বারের থিম সঙ্গীত। সেখানে সঙ্গীতচর্চার নানা উপকরণ গিটার, তানপুরা–সহ নানা বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। পুরাতন ঝাড়গ্রামের উন্নয়নী সঙ্ঘের সরস্বতী পুজোয় ফুটে উঠেছে পাহাড় এবং বিলুপ্ত প্রায় ডাইনোসোর। ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ রোড অরবিন্দপল্লিতে অরবিন্দ সঙ্ঘের পুজোয় এ বারের থিম ছত্রাক। একটি গুহার মধ্যে রয়েছে সরস্বতীর প্রতিমা। গুহার বাইরে রয়েছে নানা ধরনের ছত্রাক। পুজো আজ।

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর ২ নং ব্লকের পঁচেট আরিয়ান ক্লাবের এ বছরের থিম জীববৈচিত্র্য। উদ্যোক্তারা জানান, এক মাস ধরে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। খড়, মাটি, শুকনো গাছের ছাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। মণ্ডপে রয়েছে খড়ের ছাউনি দেওয়া বাড়ির ওপর ব্যাঙের ছাতা, ব‍্যাঙ, ঝিঁঝিঁ পোকা, ফড়িং। মণ্ডপের ভেতরে থাকছে শুকনো গাছের ছাল দিয়ে তৈরি হরিণ, হাতি, পাখি। এগরার ব্রাইট হোপ–এর এ বারের থিম রাজস্থানের রাজবাড়ি। রাজবাড়ির প্রকৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি, সরস্বতী প্রতিমা রুপোর গয়না দিয়ে তৈরি হয়েছে। প্রতিমার নামকরণ করা হয়েছে ‘রানি-মা’।

    রাজনৈতিক শ্লেষের থিম নিয়ে মণ্ডপ তৈরি সম্পর্কে মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘আমি এ ধরনের সংস্কৃতির বিরোধী। মেদিনীপুর কলেজ-কলেজিয়েট মাঠ, ওই রাস্তা ইত্যাদির সঙ্গে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। সেখানে এমন ব্যঙ্গ–বিদ্রূপ, ব্যক্তিগত আক্রমণ আমি সমর্থন করি না। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প তুলে ধরা যেতেই পারে। অনেক ঘটনা আছে যা সমাজকে ভালো বার্তা দেয়। সেসব উঠে আসুক পুজোর থিমে।’ মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, ‘মেদিনীপুরের সরস্বতী পুজোর ঐতিহ্য ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে একে অপরকে আক্রমণ। মানুষ এটা উপভোগ করেন। তা ছাড়া, এই পুজোয় রাজনৈতিক দলগুলো কেউ সরাসরি যুক্ত থাকে না। যুবরা এই পুজোর আয়োজন করে থাকে।’

  • Link to this news (এই সময়)