এই সময়, শিলিগুড়ি: প্রথমে কাঁটাতার কেটে এপারে প্রবেশ। তারপর বাড়িভাড়া নিয়ে নিশ্চিন্তে পাচারে তদারকি। নেশার সামগ্রী থেকে গোরু পাচারের কাজে তারা গাঁটছড়া বেঁধেছিল বাড়ির মালিকের সঙ্গেই। ফুলবাড়ি সীমান্তে ধৃত বাংলাদেশিদের জেরা করে এমনই তথ্য পেয়েছে নিউ জলপাইগুড়ি থানা।
বৃহস্পতিবার রাতে হাইড্রোলিক কাটার এবং একাধিক ধারালো অস্ত্র সমেত তিন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ফুলবাড়ি সীমান্তে একটি বাড়ি থেকে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর অভিযুক্তদের আদালতে তুলে হেফাজতে নেওয়া হয়। ধৃত মহম্মদ হাবিব, মহম্মদ শামসের আলি এবং আতিরুল মহম্মদ মাস ছয়েক আগে ভারতে ঢুকেছিল।
সেই সময়েই ফুলবাড়ি এলাকার বাসিন্দা এমডি ফজকটুর বাড়ি ভাড়ায় নেয়। মাঝেমধ্যেই অভিযুক্তরা বাংলাদেশ আসা–যাওয়া করত। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট, কাফ সিরাপ এ দেশে ধাপে ধাপে নিয়ে এসেছে অভিযুক্তরা। বিনিময় ভারত থেকে গোরু পাচার করেছে বাংলাদেশে। সীমান্ত এলাকায় থেকে এই সমস্ত কাজ করতে সুবিধা বলেই ফুলবাড়িতে বাড়িভাড়া নিয়েছিল অভিযুক্তরা। বাড়ির মালিক আগে থেকেই সবটা জানত। সে নিজেই স্থানীয় মাদক কারবারি। বাংলাদেশিদের সঙ্গে সে–ই গোরুর কারবারিদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। মাদক এবং গোরু পাচারের কারবার নির্বিঘ্নে চালানোর জন্য বাড়ির মালিককে মোটা টাকা কমিশন দিত বাংলাদেশিরা।
মোট ছ’জন বাংলাদেশি কাঁটাতার কেটে ভারতে প্রবেশ করেছিল। এই ছ’জনই ফজকটুর বাড়িতে ভাড়া থাকত। এই ফজকটু আবার ঠিকাদারের অধীনে সরকারি প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক কাজে নিযুক্ত ছিল। বাংলাদেশ থেকে মাদক নিয়ে আসা, এ দেশ থেকে গোরু বাংলাদেশে পাচার করা, সবটাই ফজকটুর মদতে হতো বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। তিন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ফজকটু গা ঢাকা দিয়েছে। একইসঙ্গে পলাতক আরও তিন বাংলাদেশি। অভিযুক্তদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। সীমান্তে বিএসএফকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার রাকেশ সিংয়ের বক্তব্য, ‘অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। বাকিদের খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে। এই চক্রে আরও অনেকেই রয়েছে বলে আমাদের অনুমান।’
ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে যে সমস্ত সিম কার্ড উদ্ধার হয়েছে, সেগুলি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। কল রেকর্ড–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাড়ির মালিকের ফোন ট্র্যাক করা হচ্ছে। পুলিশের দাবি, জেরায় অভিযুক্তরা জানিয়েছে, কাঁটাতার কেটেই ভারতে প্রবেশ করেছিল তারা। কোন এলাকায় তার কাটা হয়েছিল, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। হাসিনা সরকারের পতনের পর কাঁটাতার কেটে বাংলাদেশিদের এ দেশে প্রবেশকে ভালো চোখে দেখছে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও। তাই পুলিশের পাশাপাশি বিএসএফ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাও অভিযুক্তদের জেরা করছে।