• চুপ, রিল তৈরি হচ্ছে!
    এই সময় | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সব্যসাচী ঘোষ ও অর্ঘ্য বিশ্বাস

    এ ‘মজা’র যেন ভাগ হয় না! একটা হাতি আর্থ-মুভারকে নাগাড়ে ধাক্কা মারছে। আর আমুদে লোকজন রিল তৈরির চক্করে মোবাইলে সেই দৃশ্য রেকর্ড করে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত হাতিটি গুরুতর জখম হয়ে তখনকার মতো এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

    শনিবার মালবাজারের ডামডিম এলাকার ওই ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন ক্ষুব্ধ পরিবেশপ্রেমীরা। তাঁদের দাবি, ‘আমরা কোন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি তা ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়। যে কোনও নৃশংস ঘটনা ঘটলে ‘পাশবিক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ পশুরা কিন্তু মজার ছলে কখনও এমন কিছু করে না। এ কোন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিচ্ছি আমরা?’

    কেরালার মল্লপ্পুরম থেকে এ রাজ্যের ঝাড়গ্রাম— হাতির উপরে নির্যাতনের তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। ২০২০ সালের মে মাসে মল্লপুরমে আনারসের ভিতর বাজি ভরে দিয়েছিল কিছু লোকজন। সেই আনারস খেয়ে মৃত্যু হয় একটি অন্তঃসত্ত্বা হাতির। নৃশংস ওই ঘটনার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানাজানি হতেই হইচই পড়ে যায় দেশজুড়ে। গত বছর স্বাধীনতা দিবসে ঝাড়গ্রামেও অন্তঃসত্ত্বা একটি হাতিকেও জ্বলন্ত হুলা ছুড়ে মারা হয়। প্রায় একদিন ধরে পুড়তে পুড়তে হাতিটি মারা যায়। সেই ঘটনার পরেও তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রশ্ন ওঠে বন দপ্তরের ভূমিকা নিয়েও।

    উত্তরবঙ্গেও এমন একাধিক ঘটনা রয়েছে। ২০১৮ সালে নাগরাকাটায় হাতির পায়ে তির ছোড়া হয়। সেখান থেকেই দগদগে ঘা। পরে হাতিটি পঙ্গু হয়ে পড়ে। ২০২৩ সালে দলমোড় চা বাগানে হাতির দলকে লক্ষ্য করে ক্রমাগত চকোলেট বোমা ছোড়া হয়। চোখে বোমার আঘাত পেয়ে একটি হাতি অন্ধ হয়ে যায়।

    মালবাজারের এই ঘটনার পরেও প্রশ্ন উঠছে। পরিবেশকর্মীদের ক্ষোভ, রিল তৈরির জন্য একটা জখম হাতিকে এ ভাবে উত্ত্যক্ত করা হবে? ডুয়ার্সের পরিবেশপ্রেমী অনির্বাণ মজুমদার বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় রিলের নেশায় এক শ্রেণির মানুষ যে-ভাবে দিনভর হাতিটিকে উত্ত্যক্ত করেছে তা সত্যিই নিন্দনীয়।’

    বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, শরীরে একাধিক জখম নিয়ে শনিবার ক্রান্তি ব্লকের আপালচাঁদের জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে আসে ওই পূর্ণবয়স্ক দাঁতালটি৷ রাতে হাতিটি চেল নদী পেরিয়ে তারঘেরা জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। চা-বাগানের ব্লেড-তারের সংস্পর্শে এসে হাতির দেহে একাধিক ক্ষতও তৈরি হয়। তারপরে আর্থ-মুভারে ধাক্কা মেরে গুরুতর জখম হয় হাতিটি।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, আর্থ-মুভারটিকে হাতিটি হয়তো প্রতিপক্ষ ভেবেছিল। তা ছাড়া চালকও শুঁড়ের মতো যন্ত্রটি বারবার নাড়িয়ে হাতিটিকে উত্ত্যক্ত করছিল। তাতেই আরও ক্ষেপে যায় হাতিটি। সেই সময়ে কিছু লোকজন বিষয়টি বাধা না-দিয়ে ‘মজা’ দেখেন এবং রিল তৈরির জন্য ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করেন।

  • Link to this news (এই সময়)