সুজয় মুখোপাধ্যায়
‘ওকে মেরো না’ বলেই ‘নকল’ ডক্টর হাজরার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুকুল। ময়ূরের দিকে বন্দুক তাক করতেই মুকুল বুঝে গিয়েছিল তার সঙ্গে যে রয়েছে, সে আসলে ‘দুষ্টু লোক’। মনে পড়ছে দৃশ্যটার কথা? ‘সোনার কেল্লা’ সিনেমায় জয়সালমির দুর্গের দৃশ্য। অবলা পাখির প্রতি অন্যায় মেনে নিতে পারেনি ওইটুকু খুদেও।
এক টুকরো জয়সালমির আছে হুগলির রাজহাটেও। গাছ-গাছালি দিয়ে ঘেরা ছোট্ট গ্রামে ঝাঁকে ঝাঁকে ময়ূর ঘুরে বেড়ায় গ্রামের মেঠো পথে। এক-দু’জনের নামও রেখে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। পুটুপুটু, রুমকি, ঝুমকি বলে ডাকলেই চলে আসে উঠোনে। কুন্তি ও সরস্বতী নদীর মাঝে থাকা এই গ্রাম যেন ময়ূরের স্বর্গরাজ্য।
স্থানীয়দের দাবি, কয়েক বছর আগে গ্রামে ময়ূর-ময়ূরীর সংখ্যা ছিল অনেক। একটি ঝাঁকে প্রায় পাঁচশো থেকে সাতশো ময়ূর ঘুরে বেড়াতো দলবেঁধে। সংখ্যাটা কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কুন্তি নদীর পাশেই বাঁশবনে ছিল তাদের আস্তানা। নদী বর্তমানে গতিপথ হারিয়ে স্থির হয়ে গিয়েছে। সাফ হয়ে যাচ্ছে জঙ্গল। ভিটে ছাড়া হচ্ছে ময়ূরেরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও প্রাণ যাচ্ছে অনেকের।
কিন্তু ওই এলাকায় ময়ূর এল কী ভাবে? স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ কোল্লার জানান, ওই গ্রামে ময়ূরের আগমন ঘটে প্রায় দেড়শো বছর আগের। রাজহাট পশ্চিম পাড়ার ডাক্তার নীলমণি চক্রবর্তীর জমিদারি ছিল। বাড়িতে দুটি ময়ূর ময়ূরী থাকতো। বংশবিস্তার করে সেটা কয়েক হাজারে পৌঁছে যায়। পরবর্তীকালে জমিদারি উঠে যায়। তখনই থেকেই খোলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়াতে থাকে ওরা।
অবজ্ঞা, অবহেলাতেই রয়েছে দেশের জাতীয় পাখি। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘ময়ূরকে বাঁচাতে গেলে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এটা রাজহাট এলাকার একটা ঐতিহ্য। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানিয়েও সে ভাবে সাড়া মেলেনি। তাই ময়ূর বাঁচাতে গেলে চাই সরকারি উদ্যোগ।’
হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়া জানান, রাজহাট এলাকায় অনেক ময়ূর থাকে । বর্তমানে এই জায়গার নামই হয়ে গিয়েছে ‘ময়ূর মহল’। তাঁর কথায়, ‘জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করছি ময়ূরদের যাতে থাকা ও খাবারের কোনও অসুবিধা না হয়। ওই এলাকায় যাতে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা যায় সেদিকেও আমরা নজর দেব।’