সংবাদমাধ্যমে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করে দলের কাছে তড়িঘড়ি ক্ষমা চাইলেন মদন মিত্র। রবি ও সোমবার সংবাদমাধ্যমের সামনে এমন বেশকিছু মন্তব্য তিনি করেছেন, যার জন্য সার্বিক ভাবে তৃণমূল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মর্মাহত হয়েছেন— এমনটাই উপলব্ধি জোড়াফুলের এই পোড়খাওয়া নেতার। এই পরিস্থিতিতে সোমবার রাতে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে চিঠি লিখে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন কামারহাটির বিধায়ক।
গত কয়েক দিনে মদন মিত্র আচমকা বেশ কিছু মন্তব্য করেন, যা গোটা দলকেই অস্বস্তিতে ফেলেছে বলে মত জোড়াফুলের নেতাদের অনেকের। তৃণমূলের কয়েকজন ‘পুরোনো’ ‘বড়’ নেতা পদ পাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন বলে তিনি একটি সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ করেন। তৃণমূলে কোনও পদ এখন সরকারি পদের থেকেও দামি বলে প্রকাশ্যে কটাক্ষও ছুড়ে দেন। মদন এমনও দাবি করেন যে, তৃণমূলের পদ পাওয়ার জন্য ৫–১০ লক্ষ টাকা চাওয়া হয় এবং একটি ভোটকুশলী সংস্থার সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর এই টাকার বিষয়টি সামনে এসেছে।
সংবাদমাধ্যমে মদন আরও দাবি করেন, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অন্ধকারে রেখে এই কাজ করা হয়েছে এবং এই ভোটকুশলী সংস্থার কারণে মমতার গায়ে কালি লেগেছে। তৃণমূল মমতার উত্তরসূরি কে হবেন, তা একমাত্র দলনেত্রীই ঠিক করবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একাধিক সংবাদমাধ্যমে মদনের এমন মন্তব্যে তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়, হঠাৎ এমন কথা কেন বললেন কামারহাটির বিধায়ক। এর পরে এ দিন রাতে চিঠি লিখে ক্ষমা চান তিনি।
চিঠিতে মদন লিখেছেন, ‘সার্বিক ভাবে আমাদের দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আমাদের দলের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মর্মাহত হয়েছেন। এর জন আমি লিখিত ভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি এবং দলকে অনুরোধ করছি, আমায় ভুল না–বুঝে ক্ষমা করার জন্য।’
এর আগে মদনের মন্তব্যগুলিকে হাতিয়ার করে তৃণমূলকে বিঁধতে শুরু করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম–সহ বিরোধী নেতৃত্ব। মদনের বেলাগাম মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব যে প্রবল অসন্তুষ্ট, সোমবার বিকেলে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথায় প্রথম তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কুণাল এ দিন বলেন, ‘মদন মিত্র অনেক সিনিয়র নেতা। তাঁর বিষয়টি দলের সিনিয়র নেতারা দেখছেন।’ তৃণমূল সূত্রের খবর, টাকার বিনিময়ে পদ পাওয়া, ভোটকুশলী সংস্থাকে নিয়ে মদনের মন্তব্য যে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব একেবারেই ভালো চোখে দেখছেন না, সন্ধের মধ্যেই সেই বার্তা কামারহাটির বিধায়কের কাছে যায়। তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কড়া মনোভাব দেখেই দ্রুত চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়েছেন রাজ্যের এই প্রাক্তন মন্ত্রী।