অতীশ সেন, ডুয়ার্স: জলপাইগুড়ি জেলার ডামডিমে আহত হাতিকে তাড়াতে জেসিবি ব্যবহারের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরই জেসিবি’টিকে আটক করল পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে চালককে। জানা গিয়েছে গ্রেপ্তার জেসিবি চালক অমন এক্কা’র বাড়ি ওদলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের তারঘেরা এলাকায়। রবিবার রাতে মাল থানার পুলিশ জেসিবি’টিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। চালকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
শনিবার ভোরে আপালচাঁদ জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে একটি আহত দাঁতাল হাতি বেতগুঁড়ি চা বাগান হয়ে কুমলাইগ্রাম পঞ্চায়েতের সেনপাড়া এলাকায় চলে আসে। সেখান থেকে মানুষের তাড়া খেয়ে সেটি পশ্চিম ডামডিম এলাকার চা বাগানে আশ্রয় নেয়। হাতিটির পিছনের পা ও চোখে আঘাত থাকায় সেটি ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছিল না। হাতিটি তারঘেরা রেঞ্জ সংলগ্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর সময় একটি জেসিবি মেশিন দিয়ে হাতিটিকে তাড়ানোর চেষ্টা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায় জেসিবি চালক ‘লোডার বাকেট’ দিয়ে হাতিটির সঙ্গে লড়াই করছে, হাতিটির দিকে তেড়ে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ হাতিটিও জেসিবিকে আক্রমণ করে এবং আরও খানিকটা আহত হয়। এছাড়াও প্রচুর মানুষ হাতিটিকে উত্যক্ত করছে, পাথর ছুঁড়ছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ‘মাল মাউন্টেন ট্রেকার ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষ থেকে জেসিবি চালক এবং হাতিটিকে যাঁরা উত্যক্ত করছিল তাঁদের বিরুদ্ধে মাল থানায় এবং বনদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এর পরই রবিবার রাতে জেসিবি’টিকে আটক করার পাশাপাশি সেটির চালক’কে গ্রেপ্তার করে মাল থানার পুলিশ। জানা গেছে, সোমবার বিকেল পর্যন্ত হাতিটি তারঘেরা বনাঞ্চলে রয়েছে। তবে সেটির চিকিৎসার কোনও রকম আয়োজন দেখা যায়নি।
ওদলাবাড়ি নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটির পক্ষ থেকে নফসর আলি বলেন ‘উত্তরবঙ্গে বন্য পশুদের চিকিৎসার তেমন কোনও পরিকাঠামো নেই। হাসপাতাল নেই। কোনও পশু আহত হলে ‘দেখছি–দেখব’ করতে করতেই অনেক সময় পেরিয়ে যায়। বেশিরভাগ সময়েই অসুস্থ কিংবা আহত বন্য পশুর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু ঘটে। এই হাতিটিরও কোনও চিকিৎসা শুরু হয়নি। হাতিটিকে তাড়িয়ে তারঘেরা জঙ্গলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে আদৌ চিকিৎসা সম্ভব কি না সন্দেহ রয়েছে। এইভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন আগে আপালচাঁদ জঙ্গলে যেভাবে একটি অসুস্থ হাতি বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছিল, এই হাতিটিরও তেমনই পরিণতি হবে।’