নিরাকার ব্রহ্মের মতাদর্শে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর হস্টেলে সরস্বতী পূজা
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিরাকার ব্রহ্মের উপাসক মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে কোনও মূর্তি পূজার রেওয়াজ নেই। আর সেই বিশ্বভারতীর হোস্টেলে সরস্বতীর মূর্তি পূজা। শতাব্দী প্রাচীন প্রথা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিশ্রী ছাত্রাবাসের সাকার বাগ্দেবীর আরাধনা নিয়ে বাঁধল বিতর্ক। খবর শুনে ক্ষুব্ধ এখানকার প্রাক্তনী,পড়ুয়া, প্রবীণ আশ্রমিক থেকে স্থানীয় বাসিন্দারাও।
প্রসঙ্গত নিরাকার ব্রহ্মের সমর্থক জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার। ঊনবিংশ শতাব্দীতে একসময় ব্রাহ্ম সমাজের রীতি নীতি ও আচার নিয়ে জোর চর্চা চলত। গোটা কলকাতা শহরের একেশ্বর ব্রহ্মবাদীরা সেই সময় ঠাকুর বাড়িতে তাঁদের মতাদর্শ নিয়ে নিয়মিত আসর বসাতেন। সেখানে সামিল হতেন শহরের তৎকালীন বুদ্ধিজীবী ও মনীষীরা। এই একেশ্বর ও বহুত্ববাদ নিয়ে মতানৈক্যের জেরে গোটা কলকাতা শহরের সমাজ সংস্কারক ও বুদ্ধিজীবীরা প্রায় আড়াআড়িভাবে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিলেন। এই ব্রাহ্ম সমাজের প্রবর্তন করেছিলেন রাজা রামমোহন রায়। যার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তাঁরই শিষ্য মহর্ষি দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর।
এই মতাদর্শ অনুসারে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে এখানে নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা শুরু করেন। যেখানে পুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম থেকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের ছাত্রাবাসে মূর্তি পূজা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তনী সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরস্বতী পুজোকে ঘিরে পড়ুয়াদের এমন আচরণ অত্যন্ত নিন্দার। যা কখনই কাম্য নয়।”
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের মধ্যে মূর্তিপুজো ও ব্যক্তিপুজো বিরোধী। এখানে আশ্রম প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ অথবা বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও কোনও মূর্তি নেই। এমন কাজ যদি পড়ুয়ারা করে থাকে অবশ্যই নিন্দার। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের নজরদারি প্রয়োজন। যদিও এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে এই ঘটনার নিন্দা করেছেন অখিল ভারতী বিদ্যার্থী পরিষদের বোলপুরে নগর সভাপতি শোভনজিৎ সাহা। তিনি বলেন, বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে মূর্তিপুজো নিষিদ্ধ বলেই সরস্বতী পুজোতে শ্যামবাটির এক পড়ুয়ার বাড়িতেই ঘরোয়াভাবে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে। শান্তিশ্রী হস্টেলে সরস্বতী পুজোর আয়োজন অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং নিন্দার।
অন্যদিকে বিশ্বভারতীতে মূর্তি পূজা নিয়ে তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাহুল আচার্য। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মূর্তিপুজোর চল নেই। ওয়ার্ডেন, নিরাপত্তারক্ষী থাকা সত্ত্বেও শান্তিশ্রী বয়েজ হস্টেলে কিভাবে সরস্বতী পুজোর আয়োজন হতে পারে। কর্তৃপক্ষের অবশ্যই নজরদারির প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, যাঁরা এই কাজ করলেন, খতিয়ে দেখা প্রয়োজন তাঁরা বিশ্বভারতীর পড়ুয়া কিনা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এই বিষয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।