শিলিগুড়ি শহরের ব্যস্ত রাস্তা। সোমবার সন্ধে। সেখানেই রাস্তার উপর চলন্ত টোটো থেকে ছুড়ে ফেলা হলো এক শিশুকন্যাকে। সোমবার সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ শিলিগুড়ি পুরনিগমের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা দেখে আঁতকে ওঠে পথচলতি জনতা। শিশুটিকে কাঁদতে দেখে তার দিকে দৌড়ে যান স্থানীয়রা। ততক্ষণে টোটোচালক তাঁর টোটো দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। সেখান থেকে নেমে এক মহিলা দৌড়ে আসেন শিশুর কাছে। নিজেকে মা বলে পরিচয় দিলেও তাঁকে দেখেই আরও জোরে কেঁদে উঠেছিল ওই শিশুকন্যা। তা দেখেই স্থানীয় এক মহিলা ওই শিশুকে কোলে নিয়ে নেন, খবর দেন স্থানীয় কাউন্সিলর অভয়া বসুকে।
খবর পেয়ে ওই কাউন্সিলর এসে ওই শিশুকে নিয়ে সোজা শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে পৌঁছন। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে রয়েছে ওই শিশু কন্যা। তার দিদাকে খবর দেওয়া হয়েছে, শিশুর কাছে এখন তিনিই রয়েছেন। কাউন্সিলর অভয়া বসু বলেন, ‘বাচ্চাটাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে আমার কাছে ফোন আসে। আমি দ্রুত গিয়ে বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। ওর সারা শরীরে আঁচড়ের দাগ রয়েছে। ফেলে দেওয়ায় মাথায় চোট পেয়েছে। পুলিশ মঙ্গলবার শিশুকে সিডব্লিউসির কাছে প্রডিউস করবে।’
এ দিন টোটোয় ওই শিশুর সঙ্গে তার বাবা-মা ছিল। দীর্ঘদিন ধরেই দুইজনের মধ্যে অশান্তি-ঝগড়া চলছে। বছর পাঁচেক আগে এদের বিয়ে হয়, এটি ওই শিশুর বাবার দ্বিতীয় বিয়ে। ওই পক্ষেরই সন্তান এই শিশু। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, দুইজনের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন ছিল, নানা কারণে ঝগড়াও হয়। শিলিগুড়ি শক্তিগড় দু’নম্বর রাস্তা এলাকায় ভাড়া থাকেন ওই দম্পতি। সোমবার সকাল থেকে ঝামেলা চলছিল তাঁদের মধ্যে। টোটো করে যাওয়ার সময় ফের দু’জনের কথা-কাটাকাটি শুরু হয়, সেটাই হাতাহাতিতে গড়ায়। অভিযোগ, নেতাজি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে হঠাৎই টোটো থেকে চার বছরের শিশুকন্যাকে ছুড়ে ফেলে দেয় মা। তা দেখেই দৌড়ে আসেন স্থানীয়রা। বাবা-মা এলেও তাঁদের কোলে যেতে চাইছিল না ওই শিশু। পরে হাসপাতালে দিদাকে দেখেই লাফিয়ে তাঁর কোলে চলে যায় শিশু। হাসপাতাল সূত্রের খবর, শিশুর শরীরে একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কিছু জায়গায় নখের আঁচড়ও দেখা গিয়েছে। মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। এরপরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিলিগুড়ি থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে থানার সিডব্লিউপিও ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তিনি সবটা শুনে সিডব্লিউসিকে জানিয়ে দেন। মঙ্গলবার সকালে ওই শিশুকন্যাকে সিডব্লিউসির সামনে আনা হবে। পরে শিশুকে কোথায় রাখা হবে তা ঠিক করবে সিডব্লিউসি। মা ও বাবার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি, সোমবার রাত পর্যন্ত হাসপাতাল চত্বরেই দেখা গিয়েছে তাদের।