সংবাদদাতা, ডোমকল: সীমান্তের বুক চিরে বয়ে গিয়েছে পদ্মা। দু’ পারে দুই দেশ। মাঝে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় অনুপ্রবেশ-পাচার লেগেই থাকত। সম্প্রতি সাগরপাড়ার সিংপাড়া থেকে সিতানগর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যজুড়ে সীমান্তে ফেন্সিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক সীমন্ত থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভেতর দিয়ে ফেন্সিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। আর এতেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে নতুন করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এভাবে ফেন্সিং দেওয়া হলে অসুরক্ষিত হয়ে পড়বে কাঁটাতারের ওপারে প্রায় চার কিলোমিটার জুড়ে থাকা ভারতীয় জমিগুলি। পাশপাশি একাধিক বাড়িও কাঁটাতারের ওপারে পড়ে যাবে। তাই সীমান্তজুড়ে ওই বেড়া দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
আগে সীমান্তের অনেকটা ভেতরে ডিউটি করত বিএসএফ। তবে ডিসেম্বরের শুরুতেই জিরো পয়েন্ট ঘেঁষে ডিউটি শুরু করে তারা। এতে স্বস্তি মিলেছিল আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের। একদিকে সীমান্তের জমিতে দাপাদাপি বন্ধ হয়েছিল বাংলাদেশিদের। পাশাপাশি সীমান্তের জমিতে চাষ করা সুবিধেজনক হয়েছিল ভারতীয় নাগরিকদের। তবে গ্রামবাসীদের শঙ্কা, সেই সুখ চিরস্থায়ী হচ্ছে না। কারণ সীমান্তজুড়ে হঠাৎই শুরু হয়েছে ফেন্সিং তৈরির তোড়জোড়। কিন্তু তা সীমান্ত ঘেঁষে না হয়ে তা সীমান্ত থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভেতরে করা হচ্ছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সীমান্তে ফেন্সিং দেওয়ার জন্য কেন্দ্র সরকারের সংস্থা সিপিডব্লুডি কাজ শুরু করেছে। তাই বাসিন্দাদের দাবি, চার কিলোমিটার ভেতরে ভারতীয় জমিতে নয়, ফেন্সিংয়ের কাজ আন্তর্জাতিক আইন মেনে জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ গজ দূরে করা হোক। এতে ভারতীয় বাসিন্দাদের জমিবাড়ি সুরক্ষিত থাকবে।
সিতানগরের বাসিন্দা মামনি বিবি বলেন, আমাদের বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে বর্ডার লাইন। অথচ আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তা ঘেঁষে ফেন্সিংয়ের কাজ করা হচ্ছে। এতে আমাদের বাড়িগুলিও কাঁটাতারের ওপারে পড়ে যাবে। এতে আমাদের ভীষণ সমস্যায় পড়তে হবে। আমরা চাই ফেন্সিং নদীর ধারে ঘেঁষে করা হোক।
সাহেবনগর পঞ্চায়েত প্রধান মজিবর রহমান বিশ্বাস বলেন, ওই দিকে জায়গা থাকার পরেও ভারতীয় জমির প্রায় চার কিলোমিটার ভেতর দিয়ে ফেন্সিং করা হচ্ছে। এভাবে ফেন্সিং হলে আমাদের গ্রামের প্রচুর মানুষের জমি, বাড়ি ফেন্সিংয়ের ওপারে পড়ে যাবে। আমি কেন আমাদের গ্রামের লোককে ফেন্সিংয়ের ওপারে রাখব? ফেন্সিং করা হলে সীমান্ত ঘেঁষে থাকা আমাদের পঞ্চায়েতের জমি দিয়ে করুক, এতে সরকারকে যেমন জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না, তেমনই আমাদের জমিগুলিও সুরক্ষিত থাকবে। পুরো বিষয়টি আমরা বিভিন্ন মহলে লিখিতভাবে জানিয়েছি। ডোমকলের এসডিও শুভঙ্কর বালা বলেন, ফেন্সিংয়ের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা দেখে। আমাদের ভূমিদপ্তরের তরফে জমি দেওয়া হয়। দুই দপ্তরের তরফে যুগ্মভাবে খতিয়ে দেখার পরেই কাজ শুরু হয়। তবে এই ধরনের কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।