• বসন্তের উষ্ণতা মেখে সরস্বতী পুজো  দুরুদুরু বুকে প্রেমের প্রস্তাব মনের মানুষকে
    বর্তমান | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: জেকে কলেজের এসসি হস্টেলের পুজোয় বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে এসেছিল অস্মিতা। হলুদ শাড়িতে ছোটবেলার ‘ক্রাশ’ অস্মিতাকে দেখে এদিন আর মাথা ঠিক রাখতে পারেনি নিলয়। নিলয়ের মনের ভাব বুঝতে দেরি হয়নি রাহুল, অনুপম, প্রীতমদের। বন্ধুদের ঠেলায় পড়লে যা হয়! এতদিন ধরে বলতে না পারা সবকিছু এক লহমায় অস্মিতাকে উগরে দিল নিলয়। অস্মিতা শুধু জিজ্ঞেস করেছিল, ‘এতদিন বলিসনি কেন?’ শঙ্খ ঘোষের কথা ধার করে লাজুক নিলয় শুনিয়েছিল, ‘বলিনি কখনও/আমি তো ভেবেছি বলা হয়ে গেছে কবে...।’


    বাঙালির কাছে বরাবরই প্রেমের দিন দুটো। একটা ‘সরকারি’ মতে ১৪ ফেব্রুয়ারি— ভ্যালেন্টাইনস ডে। আর একটা বাঙালির নিজস্ব— সরস্বতী পুজো। সেই বহু প্রতীক্ষিত দিনটি আসতেই উদ্‌যাপনে মাতল বাঙালি যুবক যুবতীরা। সকাল সকাল ঠান্ডা জলে স্নান করে শাড়ি, পাঞ্জাবিতে সেজে বেরিয়ে পড়া। মণ্ডপে অঞ্জলি দেওয়ার পরেই কমবয়সিদের ভিড় আছড়ে পড়ে বিভিন্ন স্কুল কলেজে। প্রেমিকাকে বাইকে চাপিয়ে ঘুরে বেড়ানো থেকে সেলফি, প্রেমিকার কুঁচি ঠিক করে দেওয়ার ছবিই ঘুরে ফিরে দেখা গেল সারাদিন। 


    এদিন শাড়ি পরে নিস্তারিণী কলেজে এসেছিল ফার্স্ট ইয়ারের অহনা। কিন্তু শাড়ি পরা অভ্যাস নেই তার। তাই বন্ধুদের সঙ্গে হাঁটতে গিয়ে বার বার পিছিয়ে পড়ছিল সে। বন্ধুরা রাগারাগি করলেও একগাল হাসি নিয়ে অহনা বলছিল, ‘জানিসই তো, আমি শাড়ি ক্যারি করতে পারি না।’ এদিকে আবার প্রেমিকাকে নিয়ে ঠাকুর দেখেতে বেরিয়েও মাঝেমধ্যেই অন্য মেয়েদের দিকে চোখ চলে যাচ্ছিল শানুর। প্রেমিকের চোখ যে অন্য কিছু খুঁজছে, তা নজর এড়ায়নি ঐশ্বর্যর। অন্য মেয়ে দেখার ‘অপরাধে’ এদিনই ব্রেকআপ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল দুজনের। তবে বন্ধুদের হস্তক্ষেপে এযাত্রায় প্রেমটা বেঁচে গিয়েছে। শানুও ঐশ্বর্যকে প্রমিস করেছে, এ জীবনে আর অন্য মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাবে না সে!


    সরস্বতী পুজোর দিনভর জেলার বিভিন্ন প্রান্তেই দেখা গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ক্রিয়েটরদের দাপট। হলুদ শাড়ি পরে সারাদিন ধরে শুধুই রিল শ্যুট করে গেল তারা। এদিন এমনই প্রেমিকার পাল্লায় পড়ে কার্যত কালঘাম ছুটল সৌভিকের। কোথায় দু’ দণ্ড প্রেম করবে, তার উপায় নেই। প্রেমিকা হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়েছে। প্রেমিকার রিল শুট করতে করতেই সারাদিন কাবার। বন্ধুরা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তবুও অসহায় প্রেমিকের মুখে রা নেই।


    সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা। তা সত্ত্বেও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে এদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে বাজল মাইক। ক্লাবের ছেলেদের কাছে অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন অভিভাবকরা। কিন্তু তাতে থোড়াই কেয়ার! নেশাতুর চোখে সাফ জবাব, ‘চুপচাপ বাড়ি গিয়ে ঘুমোন। মা সরস্বতী কৃপা করলে পড়াশোনা না করলেও পাস করে যাবে আপনার ছেলে।’
  • Link to this news (বর্তমান)