• পদ্মের বিকাশেই কি ফের নিরঞ্জনে আস্থা?
    বর্তমান | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির জয়ের রাস্তা মসৃণ করতেই কি ফের সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি? নজিরবিহীনভাবে টানা চতুর্থবার জেলা সম্পাদক হওয়ার পর দলের নেতাদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে লক্ষ্য করে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা ধেয়ে আসছে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য ইদানীং তাঁর হাঁটাচলাতেও সাহায্যকারী প্রয়োজন হচ্ছে। তাহলে কেনই বা তাঁকে পুনরায় জেলা সম্পাদক করা হল? দলের নেতা-কর্মীদের অনেকেই সেই প্রশ্নের জবাবও দিচ্ছেন। তাঁদের মতে, নিরঞ্জন সিহির সঙ্গে বিজেপির ভালো বোঝাপড়া রয়েছে। বিধানসভা কিংবা লোকসভার মতো নির্বাচনে কৌশলে এই জেলায় বিজেপিকে জমি ছেড়ে দেওয়া হয়। আগামী দিনে তিনি জেলা সম্পাদক থাকলে এই কাজটা আরও ভালোভাবে সম্পন্ন হবে। সম্ভবত, সেকারণেই তাঁর বিকল্প কাউকে বাছা হল না।


    গত ৩১জানুয়ারি থেকে ২ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিপিএমের ২৫তম জেলা সম্মেলন হয়। এই সম্মেলন হলদিয়ায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, নিরঞ্জনবাবুর চালে সেটা নিজের এলাকা পাঁশকুড়ায় স্থানান্তর করা হয়। পরিবর্তে মে মাসে হলদিয়ায় শ্রমিক সম্মেলনের কর্মসূচি রাখা হয়েছে। এবার জেলা সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক শেখ ইব্রাহিম আলি। দলের তরুণ মুখ। ২০১৬সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিপ্লব রায়চৌধুরীর মতো হেভিওয়েট নেতাকে হারিয়ে চমকে দিয়েছিলেন। এই মুহূর্তে দলের যুব সংগঠনের জেলা সম্পাদক। দলের যুব শিবিরের পাশাপাশি সিপিএম নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ ইব্রাহিম সম্ভাব্য জেলা সম্পাদক বলে ধরে নিয়েছিলেন। এছাড়াও দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য হিমাংশু দাস এবং পরিতোষ পট্টনায়েকের নাম আলোচনায় ছিল। কিন্তু, অত্যন্ত কৌশলে টানা চারবার জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব পেলেন নিরঞ্জনবাবু।


    গত বছর নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় সিপিএমের মোট এরিয়া কমিটির সংখ্যা ছিল ৩৩টি। তারপর এরিয়া কমিটির সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এরিয়া কমিটির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪টি। পার্টির যুব কর্মীদের একটা বড় অংশকে এরিয়া কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যুব সংগঠন থেকে পার্টির সদস্যপদ পাওয়া ওই অংশ জেলা সম্পাদক হিসেবে নিরঞ্জনবাবুকে একেবারেই মেনে নিতে পারছে না।


    ডিওয়াইএফের হলদিয়া উত্তর লোকাল কমিটির সভাপতি সামসুল শা বলেন, এই জেলায় বিজেপির হাত শক্ত করতেই নিরঞ্জন সিহি টানা চারবার জেলা সম্পাদক হলেন। তাঁর সঙ্গে বিরোধী দলনেতার গোপন যোগাযোগ আছে। এনিয়ে কর্মীদের মধ্যেই গুঞ্জন চলে। এই সিদ্ধান্তে পূর্ব মেদিনীপুরে দল আরও দুর্বল হবে। তাছাড়া, পার্টি কর্মীরা বুঝেছেন, রাজ্য ঩নেতৃত্বকে টাকা দিলে পদ পাওয়া যায়। সাত-আট মাস আগে নিরঞ্জনবাবু রাজ্য পার্টি অফিসে গিয়ে গণশক্তি সহ একাধিক তহবিলে টাকা দিয়েছেন। এরআগে দ্বিতীয়বার সম্পাদক হওয়ার সময়ও তিনি টাকা দিয়েছিলেন।


    দেশপ্রাণ ব্লকের এক সিপিএম নেতা এনিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ফোরক পোস্ট করেছেন। তাঁরও দাবি, পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির হাত শক্তিশালী করতে রাজ্য নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরফলে এই জেলায় সিপিএমের ঘুরে দাঁড়ানোর আরও সম্ভাবনা রইল না। 


    নিরঞ্জনবাবু বলেন, ৬০জন জেলা কমিটির সদস্যের মধ্যে একশো শতাংশ আমাকে সম্পাদক হিসেবে চেয়েছেন। সেইসঙ্গে রাজ্য নেতৃত্ব সেই সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে বিজেপির হাত শক্ত করার গল্প আসছে কোথা থেকে? অনেকে হতাশা থেকে এসব বলছেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)