• তেহট্টে ভয়াবহ বাইক দুর্ঘটনায় মৃত ৪ যুবক
    বর্তমান | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, তেহট্ট: সরস্বতী পুজোয় একই বাইকে চেপে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিল চার যুবক। বাড়ি ফেরার পথে কুয়াশায় বাইক দুর্ঘটনায় চারজনেরই মর্মান্তিক মৃত্যু হল। রবিবার গভীর রাতে করিমপুর থানার কানাইখালি বাজার এলাকায় কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়কে এঘটনা ঘটে।


    পুলিস জানিয়েছে, মৃতরা হল সুমন মণ্ডল(১৮), দীপ মণ্ডল(২০), তন্ময় বিশ্বাস(১৭) ও মণীশ বিশ্বাস(১৮)। মণীশের বাড়ি তেহট্ট থানার ছিটকা গ্রামে। বাকিদের বাড়ি তার পাশের এলাকা আসতুল্লানগরে। এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ মৃতদের পরিবার।


    রবিবার তারা করিমপুর এলাকায় সরস্বতীপুজো দেখতে গিয়েছিল। ঠাকুর দেখে গভীর রাতে একই বাইকে তারা ফিরছিল। রাস্তায় ছিল ঘন কুয়াশা। কানাইখালি বাজার এলাকায় তাদের বাইক প্রচণ্ড জোরে একটি গাছে ধাক্কা মারে। শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন এসে ওই চারজনকে উদ্ধার করে নাজিরপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তন্ময় ও সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি দু’জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতাল ও পরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শক্তিনগর হাসপাতালেই তাঁদের মৃত্যু হয়।


    মৃতদের মধ্যে তন্ময় ও মণীশ এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল। তাঁরা দু’জনেই নাজিরপুর বিদ্যাপীঠের ছাত্র ছিল। দীপ বেতাই ডঃ বি আর আম্বেদকর কলেজে তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ত। সুমন লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে চাষাবাদ করত।


    এলাকার বাসিন্দারা জানান, একই বাইকে চারজন চড়েছিল। তাঁদের মাথায় হেলমেটও ছিল না। পুলিস সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ নিয়ে প্রচার করে চলেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অল্পবয়সী ছেলেদের একাংশের মধ্যে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। সচেতনতার অভাবেই অকালে চারটি প্রাণ ঝরে গেল।


    চারজনের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছতেই আসতুল্লানগর ও ছিটকায় সরস্বতীপুজোর আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। এলাকায় নেমে আসে বিষাদের ছায়া। বেশিরভাগ বাড়িতে রান্না হয়নি। সোমবার সেখানে দেখা গেল, এলাকার বাসিন্দারাই মৃতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। সুমনের এক ভাই রয়েছে। বাকিরা প্রত্যেকে বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। সন্তানদের হারিয়ে কোনও পরিবারের সদস্যই কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। আসতুল্লানগরের বাসিন্দা নিতাই বারুই বলেন, মণীশকে আমি ভাইয়ের চোখে দেখতাম। এখানে ওর মামার বাড়ি। এদিন আসতুল্লানগর এসে আমাকে না বলে আমার বাইক নিয়ে চলে গিয়েছিল। পরে একজন ফোন করে বলে যে, ভাই বাইক নিয়ে গিয়েছে। তারপর দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে যাই। আমি শুনেছি, তন্ময় বাইক চালাচ্ছিল। দীপের বাবা বাইরে কাজ করেন। ছেলের মৃত্যুর খবর তাঁকে জানানো হয়েছে। মৃত তন্ময়ের খুড়তুতো দাদা বলেন, আমরা এখন কী করে কাকা, কাকিমাকে সান্ত্বনা দেব-তা বুঝতে পারছি না। এলাকার বাসিন্দা স্বপন বালা বলেন, চারটে ছেলেই খুব ভালো ছিল। কোনও ঝুটঝামেলায় জড়াতো না। গ্রামের মানুষ ওদের খুব ভালোবাসত।  মৃতদের শোকার্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)