• এক মাসে ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় বাঁকুড়া পুলিসের
    বর্তমান | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: যানবাহনের জরিমানার টাকায় এক মাসেই ‘কোটিপতি’ হল বাঁকুড়া পুলিস। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে বাঁকুড়া জেলা পুলিস ট্রাফিক আইনভঙ্গকারীদের কাছ থেকে জরিমানা বাবদ ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা আদায় করেছে। যা কার্যত রেকর্ড বলে জেলা পুলিসের কর্তারা জানিয়েছেন। বছর সাতেক আগেও সারা বছরে বাঁকুড়া পুলিস ট্রাফিকের জরিমানা খাতে এক কোটি টাকা আদায় করতে হিমশিম খেত। এখন মাত্র ৩০ দিনেই প্রায় দেড় কোটির কাছাকাছি জরিমানা দেখে অনেকের চোখই কার্যত ছানাবড়া হওয়ার জোগাড় হয়েছে।


    বাঁকুড়ার পুলিস সুপার বৈভব তেওয়ারি বলেন, এবছর জানুয়ারি মাসে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের কাছ থেকে আমরা ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করেছি। আগামী দিনেও আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া জারি থাকবে।


    উল্লেখ্য, ‘মোটর ভেহিকেলস’ আইনের নির্দিষ্ট ধারায় ট্রাফিক আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যে চালু রয়েছে। আগেও পুলিস আইন মোতাবেক জরিমানা বাবদ টাকা আদায় করেছে। কিন্তু, রাজ্য সরকার ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচি রূপায়ণের পর থেকে পুলিসের মধ্যে সক্রিয়তা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলাগুলির তুলনায় বাঁকুড়ায় ওই কর্মসূচির উপর বেশি জোর দেওয়া হয় বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত। তবে, কর্মসূচি রূপায়ণকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যেই পুলিসের বিরুদ্ধে চেকিংয়ের নামে যানবাহনের চালক, আরোহীদের হয়রানির অভিযোগ ওঠে।   


    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন যানবাহন থেকে জরিমানা বাবদ ২০১৪ সালে বাঁকুড়ায় মোট ২৭ লক্ষ ৫৪ হাজার ৩০০ টাকা, ২০১৫ সালে ৩২ লক্ষ ১৩ হাজার ৫০ টাকা এবং ২০১৬  সালে ২৯ লক্ষ ১৭ হাজার ৭৫০ টাকা আদায় হয়। কিন্তু, ২০১৭ সালে টাকার অঙ্ক এক ধাক্কায় কোটি ছাড়িয়ে যায়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত জেলা পুলিস ট্রাফিক আইনভঙ্গকারীদের কাছ থেকে মোট ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৭৯ হাজার ৫০ টাকা আদায় করে। ওই টাকার সিংহভাগ ঩হেলমেটবিহীন বাইক চালকদের দেওয়া জরিমানা থেকে আসে। ওইসময় এক বছরে যানবাহন থেকে এই বিপুল টাকা আদায় নজিরবিহীন বলে অনেকে দাবি করেছিলেন। তবে তারপর থেকে বছরভর জেলা পুলিসের জরিমানা আদায়ের অঙ্ক ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। করোনাকাল বাদ দিলে ফি বছর তা কোটির অঙ্ক ছুঁয়েছে। ২০২৩ সালে জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা আদায় হয়। ২০২৪ সালে তা বেড়ে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ছুঁইছুঁই হয়ে যায়। এবার সব রেকর্ড ভেঙে মাত্র এক মাসের মধ্যে জরিমানার অঙ্ক দেড় কোটির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।    


    তবে পুলিসের এই ‘সাফল্যে’ জেলার বাসিন্দাদের একাংশ ভ্রু কুঁচকেছেন। তাঁদের বক্তব্য, আইনভঙ্গকারীদের পুলিস জরিমানা করলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু, হেলমেট চেকিংয়ের নামে পুলিস ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের একাংশের ‘অতি সক্রিয়তায়’ সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এব্যাপারে জেলা পুলিসের কর্তারা নজর দিলে ভালো হয়। জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, সকলে ট্রাফিক আইন মেনে চললে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে। আমাদেরও জরিমানা আদায় করার প্রয়োজন হবে না। এই বিষয়টি চালক ও আরোহীরা মাথায় রাখলে সকলের মঙ্গল। 
  • Link to this news (বর্তমান)