৪ লক্ষ কোটির বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাবের লক্ষ্য রাজ্যের
বর্তমান | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আগামী কাল বুধবার থেকে রাজ্যে বসছে দু’দিনের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের পসরা। দেশ বিদেশের তিরিশটির বেশি শিল্পগোষ্ঠীর ছ’শোর অধিক প্রতিনিধি যোগ দিতে চলেছেন এতে। তথ্য-প্রযুক্তি, ক্ষুদ্রশিল্প, পর্যটন, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র মিলিয়ে অষ্টম বাণিজ্য সম্মেলনে অন্তত ৪ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব আসতে চলেছে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার। এবারের সম্মেলনে নির্দিষ্ট কোনও ক্ষেত্রকে থিম হিসেবে তুলে না ধরে, বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে এমন প্রত্যেকটি বিষয়কেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে তথ্য-প্রযুক্তি ও ক্ষুদ্রশিল্প ক্ষেত্র এবার বিশেষ নজর কাড়তে চলেছে বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের।
বুধবার নিউটাউনের বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে উপস্থিত থাকবেন দেশের তাবড় শিল্পপতিরা। থাকবেন কয়েকটি দেশের বিনিয়োগকারীরা। আসছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তবগে ও ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। বুধবার কনভেনশন সেন্টারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে দুপুর ২টো থেকে। ওইদিন কলকাতায় কার্যত চাঁদের হাট বসতে চলেছে। প্রথম দিনেই বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলবে প্লেনারি সেশন। একইসঙ্গে সংলগ্ন বিশ্ব বাংলা প্রদর্শনী কেন্দ্রে চলবে হস্তশিল্পসহ একাধিক প্রদর্শনী। সায়েন্স সিটির উল্টোদিকে বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণেও একাধিক প্রদর্শনী ছাড়াও দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাজ্যের শিল্পোদ্যোগীদের আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার, সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনেও কনভেনশন সেন্টার এবং মেলা প্রাঙ্গণ, দুই জায়গাতেই থাকবে একাধিক সেশন।
নবান্ন সূত্রের খবর, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই রাজ্যে বিনিয়োগের সম্ভাব্য জায়গাগুলির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে। আর সেখানেই তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য বাংলাই যে শ্রেষ্ঠ জায়গা সে বিষয়টিও তুলে ধরা হবে। কারণ, রাজ্যের হিসেব অনুযায়ী, এরাজ্যে তথ্য-প্রযুক্তিতে অন্তত ২৭ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তুলে ধরা হবে। তার জেরে প্রায় এক লক্ষ কর্মসংস্থান হবে বলেও প্রশাসনিক মহল সূত্রের অনুমান। রাজ্যে আছে ২২টি আইটি পার্ক, তথ্য-প্রযুক্তির জন্য নির্দিষ্ট অত্যাধুনিক পরিকাঠামোযুক্ত ১০টি বাড়ি, দুটি ইলেক্ট্রনিক্স পার্ক, ২৫০ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে সিলিকন আইটি হাব, রাজ্য ডেটা সেন্টার প্রভৃতি। তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এমন একাধিক পরিকাঠামোর টানেই এখানে ব্যাপক অঙ্কের বিনিয়োগ আসবে বলেই মনে করছেন অধিকাররা।
দেশের মধ্যে ক্ষুদ্রশিল্পে বাংলাই শীর্ষস্থানে। আগামী দিনেও এই ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ আসা সম্ভব বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। ফলে বস্ত্রশিল্প থেকে শুরু করে ফাউন্ড্রি প্রভৃতি সমস্ত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ টানার লক্ষ্যে রাজ্য ঝাঁপাচ্ছে। বস্ত্রশিল্পের জন্য নয়া নীতি ঘোষণা হতে পারে। সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় একাধিক সরঞ্জাম এরাজ্যের ক্ষুদ্রশিল্পের মাধ্যমে উৎপাদন হয়ে থাকে। ফলে এই ক্ষেত্রে যাতে রাজ্যে আরও বিনিয়োগ আসে তার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। এর আগের সম্মেলনটি হয়েছিল ২০২৩-এর নভেম্বরে। তাতে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল প্রায় ৩ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার। লোকসভা ভোটসহ নানা কারণে ২০২৪ সালে বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ফলে সমস্ত ফ্যাক্টর মাথায় রেখেই এবারের (অষ্টম বাণিজ্য সম্মেলন) বিনিয়োগ প্রস্তাব সপ্তম বাণিজ্য সম্মেলনকে ছাপিয়ে যাবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।