নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভালোভাবে বুঝিয়ে কিংবা বকুনি দিয়ে, আবার কড়া বার্তা দিয়েও তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতাকে সমঝানো যাচ্ছে না। বেপরোয়া মনোভাব, দলকে অস্বস্তিতে ফেলার মতো কাজ বারবারই করে চলেছেন একাধিক নেতা। তাঁদের আচরণ, কাজ ও বক্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। অসন্তুষ্ট স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বৈঠক ১০ ফেব্রুয়ারি। বিধায়কদের সেদিনই কড়া বার্তা দিতে পারেন তৃণমূল নেত্রী।
জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বিধায়কদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে সমাজে। শহর, গ্রামসহ সর্বত্র মানুষ তাঁদের বিশেষ সমীহ করেন। ফলে বিধায়কদের প্রধান দায়িত্ব এলাকার মানুষকে নাগরিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া এবং বছরভর তাঁদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। কিন্তু এই কাজে কয়েকজন বিধায়ক বিচ্যুত হয়েছেন বলেই দলীয় সূত্রে খবর। তাঁদের নাম উল্লেখসহ তৃণমূল নেত্রীর কাছে অভিযোগ গিয়েছে। তিনি সবদিকেই নজর রাখছেন। এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্য সভায় বলেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেস দলটি তৈরি হয়েছে জনস্বার্থে। জনসেবাই এই দলের মূল্য লক্ষ্য। কোনও নেতার ‘করে খাওয়া’র জন্য এই দল তৈরি হয়নি।
ফলে যে-সমস্ত বিধায়ক তথা নেতা দলকে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করছেন, তাঁদের কোনও অবস্থাতেই রেয়াত নয়, এই মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে মমতার বক্তব্যে।
তাছাড়া কয়েকজন বিধায়ক প্রায়ই বেফাঁস মন্তব্য করছেন বলে অভিযোগ। তাঁদের মন্তব্যে দল অস্বস্তির মুখে পড়ছে। কোথাও পদ পেতে টাকার প্রসঙ্গ তুলছেন বিধায়ক, আবার কোথাও বিধায়ক লবিবাজির তত্ত্ব তুলে ধরছেন। এমনকী কয়েকজন বিধায়ক জেলার অন্য নেতাদের সঙ্গে গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়ছেন। জেলার অভ্যন্তরেও বিধায়কদের মধ্যে রেষারেষি চলছে। আবার খোলা মঞ্চে মাইক্রোফোন হাতে বিধায়ক এমন বক্তব্য রেখেছেন, তাতে দল প্রবল অস্বস্তির মুখে পড়েছে। এঁদের সম্পর্কে বিশদ খবর গিয়েছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। মমতা আগামী ১০ তারিখ এই সম্পর্কে বিধায়কদের কড়া বার্তা দেবেন বলেই খবর। একইসঙ্গে ওইদিন বিধায়কদের কর্তব্যবোধ এবং পালনীয় আচরণেরও ‘পাঠ’ দেবেন তিনি।
অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ছবি’ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে তৃণমূল বিধায়ক ও দলীয় নেতৃত্বকে। চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে মমতার দুটিমাত্র ছবি। ওই দুটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়া, পোস্টার, হোর্ডিংয়ে ব্যবহার করার নির্দেশ গিয়েছে তৃণমূল ভবন থেকে। তৃণমূল ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বক্তব্য, বিধায়ক কিংবা অন্য নেতারা বিভিন্ন পোস্টার, হোর্ডিংয়ে মমতার যেসব ছবি দিয়ে থাকেন, তার বেশিরভাগই বেশ পুরনো, নেত্রীর বর্তমান চেহারার সঙ্গে সেগুলি মেলে না। তাই মমতার শুধু সাম্প্রতিক ছবিই ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।