• মহাকুম্ভ থেকে চিরকুটের ভরসায় মায়ের দেহ নিয়ে ফিরলেন ছেলে
    এই সময় | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, রামপুরহাট: মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত বীরভূমের গায়ত্রী দে–র (৫৮) মৃতদেহ প্রয়াগরাজ প্রশাসনের কোনও সরকারি নথি ছাড়াই ফিরল রাজ্যে। সোমবার বিকেলে উত্তরপ্রদেশের কুম্ভ থানা এলাকা থেকে রামপুরহাটে পৌঁছয় তাঁর দেহ। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করে ময়নাতদন্তের পরে দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে।

    গায়ত্রী দে–র ছেলে প্রতাপ ঠেলাগাড়িতে চপ বিক্রি করেন। দুঃস্থ পরিবার। কুম্ভে যাওয়ার সাধ ছিল মায়ের। তাই ধারদেনা করে আত্মীয়দের সঙ্গে মাকে কুম্ভমেলায় পাঠিয়েছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমে জানতে পারেন, মহাকুম্ভে বিপর্যয়ের কথা। খোঁজ করতে করতে জানতে পারেন মৃত্যুসংবাদ।

    কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় মায়ের দেহ কী ভাবে ফিরিয়ে আনবেন, তা ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় রামপুরহাট পুরসভা। পুরপ্রধান সৌমেন ভকতের দেওয়া গাড়িতে প্রতাপ তাঁর দুই আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি কুম্ভের উদ্দেশে রওনা দেন। প্রয়াগরাজ পৌঁছে মতিলাল নেহেরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মর্গে গিয়ে মা কে শনাক্ত করেন ছেলে।

    এর পর সেখানেই দেহ সৎকার করার অনুরোধ করলেও তা কানে তোলেনি প্রয়াগরাজ প্রশাসন। ময়নাতদন্তের আবেদন, সরকারি নথি পাওয়ার আর্জি — নাকচ হয় সবই। মর্গ থেকে লিখে দেওয়া সাদা চিরকুট ছাড়া আর কিছু পাননি প্রতাপ। সেখানে লেখা, ‘মৃত গায়ত্রী দেবীর দেহ শনাক্ত করেছেন তাঁর ছেলে প্রতাপ দে। তাঁর হাতেই দেহ তুলে দেওয়া হলো।’

    সেই চিরকুটে নেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের ছাপ বা সিল। প্রতাপের অভিযোগ, ‘মায়ের দেহ ময়নাতদন্ত করার জন্য বার বার চাপ দিই। তড়িঘড়ি দেহ বাংলায় পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ওঁরা। সরকারি কাগজ চাইলে বলে, আমাদের লোক যাবে। সে সব দিয়ে দেবে।’

    সোমবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের মর্গে মৃতদেহ এসে পৌঁছয়, কিন্তু নথি না–থাকায় জটিলতা দেখা যায়। প্রতাপ বলেন, ‘ওখান থেকে বলা হয়েছিল, সঙ্গে যিনি আসবেন, তিনি সব নথি দেবেন। সেই ভরসায় দেহ নিয়ে এসেছি।’ মৃতদেহের সঙ্গে এসেছিলেন উত্তরপ্রদেশের কুম্ভ থানার হেড কনস্টেবল নীরজ সিং। নথি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘প্রথা মেনে পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারের নির্দেশে মৃতদেহের সঙ্গে এসেছি।’ শেষে বীরভূম জেলা পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করলে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়।

    ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন পুরপ্রধান। তিনি বলেন, ‘মৃতের ছেলে ওখানেই সৎকার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা না–করে মিথ্যা কথা বলে ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই মৃতদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাদা চিরকুটে লিখে দেওয়া হয়েছে। সরকারি সিল–ছাপ কিছু নেই।’ রামপুরহাটের এসডিও সৌরভ পাণ্ডে বলেন, ‘ওখান থেকে কোনও সরকারি নথি আসেনি। হয়তো পরে কাগজ পাঠাতে পারে।’

  • Link to this news (এই সময়)