এই সময়: সিপিএমের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে রবিবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক পদে নিরঞ্জন সিহি–র পুনর্নিবাচিত হওয়ার খবর ছবি–সহ পোস্ট হতেই একজন কমেন্ট করেছিলেন, ‘এ বার পার্টি নিলামে উঠে যাবে।’
পরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কেউ লিখেছেন, ‘রাজ্য নেতৃত্ব পার্টিকে এনজিও হিসেবে দেখতে চাইছেন। তাই এই সিদ্ধান্ত।’ আবার একজন লিখেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সম্মেলন করার কী দরকার?’ অধিকাংশ পোস্টে মূল যে প্রশ্নটি তোলা হয়েছে, সেটা হলো— ‘পার্টির জেলা সম্পাদক হওয়ার মতো কোনও যোগ্য লোক কি নেই?’
এ তো গেল সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট। পার্টির অন্দরেও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর যে সদস্যরা গত এক দশকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা এতদিন কী করেছেন? কেন নতুন নেতা খুঁজে পাওয়া গেল না? মালদা জেলায় অম্বর মিত্র চতুর্থ বারের জন্য জেলা সম্পাদক হওয়ায় এমনই কিছু প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় সিপিএম কর্মী–সমর্থকরা প্রকাশ্যেই সরব হয়েছেন।
সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ব্রাঞ্চ সম্পাদক থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ পর্যন্ত কোনও নেতা তিনটি মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না। একমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। সিপিএম কর্মী–সমর্থকরা মনে করেছিলেন, মালদায় অম্বর মিত্রের হাতে ফের ব্যাটন তুলে দেওয়া হয়তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে চলেছে।
কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরে নিরঞ্জনের প্রত্যাবর্তন দেখে বাম কর্মী–সমর্থকরা বুঝে গিয়েছেন, তথাকথিত ব্যতিক্রম ক্রমেই রেওয়াজে পরিণত হতে চলেছে। তাই রাজ্য সিপিএমের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজেই বেনজির ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিপিএমের কর্মী–সমর্থকরা।
যদিও নিরঞ্জনের সাফ কথা, ‘এক প্রাক্তন মন্ত্রীর ছেলে, কয়েকজন বহিষ্কৃত সদস্য, কিছু প্রাক্তন সদস্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সব কাজ করছে। কিন্তু নতুন জেলা কমিটির ৬০ জন সদস্যই আমাকে সম্পাদক হিসেবে চেয়েছেন। রাজ্য নেতৃত্ব যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও কেউ আপত্তি করেননি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই আমি সম্পাদক হয়েছি।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় যাঁরা নিরঞ্জনের মুণ্ডপাত করেছেন, তাঁদের একজনের বিরুদ্ধে জেলার সাইবার ক্রাইমে তিনি অভিযোগও দায়ের করেছেন। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে সুজন চক্রবর্তী পূর্ব মেদিনীপুরের দায়িত্বে রয়েছেন। সুজনের বক্তব্য, ‘জেলা সম্মেলনে যদি প্রতিনিধিরা নিরঞ্জন সিহিকে সম্পাদক হিসেবে চান, আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না। দলীয় গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়েও কিছু করা হয়নি। যে সমালোচনা হচ্ছে, তাকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছি না।’
সুজনের আগে রবীন দেব পূর্ব মেদিনীপুরের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম, অনেককেই নেতৃত্বের জায়গায় তুলে এনেছি। তাঁরা জেলা কমিটিতে জায়গা পেয়েছিলেন। সেই সময়ে নতুন জেলা সম্পাদকও হয়েছিলেন। এখন সম্মেলনে যা সিদ্ধান্ত হওয়ার হয়েছে। এই নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’