• হাওড়া থেকে ভুয়ো নথি বানিয়ে টেন্ডার ভরতেন সুমন–বিপ্লবরা
    এই সময় | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কারচুপি করে তিনি ঘনিষ্ঠ ভেন্ডারদের সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আগেই উঠেছিল। এ বার জানা যাচ্ছে, ওই ভেন্ডাররা হাওড়ার একটি জেরক্স (ফটোকপি) দোকানের মালিকের সঙ্গে আঁতাঁত করে ভুয়ো নথিপত্র তৈরি করেছিলেন। পরে সেই নথিগুলি বিভিন্ন কোম্পানির নামে প্রিন্টিং প্রেসে ছাপানো হয়।

    তদন্তকারীদের দাবি, তার ভিত্তিতেই বেআইনি ভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে অন্যান্য সংস্থাগুলিকে বঞ্চিত করেছিলেন আরজি কর দুর্নীতির মামলায় ধৃত বিপ্লব সিংহ এবং সুমন হাজরা–রা। জালিয়াতির বিষয়টি জানা সত্ত্বেও সন্দীপ অভিযুক্তদের ‘প্রোটেকশন’ দিয়েছিলেন বলে ওই মামলার চার্জশিটে দাবি করেছে সিবিআই।

    ওই চার্জশিটের ২০ নম্বর পাতায় দাবি করা হয়েছে, ভুয়ো নথি তৈরি করতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন বিপ্লবরা। হাওড়ায় বিপ্লবের বাড়ির কাছে ‘অমিত জেরক্স সেন্টার অ্যান্ড বুক স্টল’–এর মালিকের কাছে একাধিক সংস্থার ‘লেটার হেড’–এর কপি পাঠানো হয়েছিল। সেই নথিগুলি নিয়ে যেতেন বিপ্লবেরই এক আত্মীয়। চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, কখনও হোয়াটসঅ‍্যাপের মাধ্যমেও পিডিএফ করে সেগুলি পাঠানো হতো।

    অভিযোগ, ওই লেটার হেডগুলো স্ক্যান করে ‘ভুয়ো’ লেটার হেড ডিজ়াইন করতেন জেরস্ক সেন্টারের মালিক। সেই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর, আন্দুল রাজমাঠ এলাকার একটি প্রিন্টিং প্রেসে পাঠিয়ে দিতেন তিনি। সিবিআই চার্জশিটে জানিয়েছে, সেখানেই সুমন ও বিপ্লবের সংস্থার নামে ভুয়ো নথি এবং লেটার হেড তৈরি হতো। সেই ভুয়ো লেটার হেডের সঙ্গে দেওয়া হতো জিএসটি সার্টিফিকেট, ড্রাগ লাইসেন্স, প্যান কার্ডের নথিও। চার্জশিটে এমনটাই দাবি করেছে সিবিআই।

    ওই ভুয়ো নথি তৈরি করে দেওয়ার জন্য অভিযুক্তরা হাওড়া বানিপুর এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার অ‍্যাকাউন্ট থেকে ইউপিআই অথবা অনলাইন পেমেন্ট করেছিলেন বলেও দাবি করা হয়েছে। বিপ্লবের ওই আত্মীয়ের মাধ্যমে জেরক্স দোকানের মালিককে নগদেও টাকা দেওয়া হয়।

    চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, জেরক্স দোকানের ওই মালিক জানিয়েছেন, ভুয়ো নথি তৈরি করে দেওয়ার জন‍্য সুমনের কাছে থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন তিনি। বিপ্লব দিয়েছিলেন ১ লক্ষ টাকা। সেই নথির ভিত্তিতে আরজি কর হাসপাতালের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন সুমন এবং বিপ্লব। এবং তা হয়েছিল ধৃত সন্দীপের মদতেই।

    আলিপুরে সিবিআই বিশেষ আদালতে সিবিআই এই মামলার ৭০ শতাংশ নথি জমা দিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। সূত্রের খবর, এ বার সিবিআই নাকি ১০০ শতাংশ নথিই আদালতে জমা দিয়েছে। আজ, মঙ্গলবার তার ভিত্তিতে সেখানে শুনানি হওয়ার কথা। অভিযোগ, গত নভেম্বরে এই মামলার চার্জশিট জমা পড়ে গেলেও, আদালতে মামলা সংক্রান্ত সব নথি জমা না–পড়ায় চার্জ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছিল না।

    এ দিন সিবিআইয়ের জমা দেওয়া নথির ভিত্তিতে অভিযুক্তদের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার কথা বিচারকের। উল্লেখ্য, সন্দীপ, বিপ্লব, সুমন–সহ মোট পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন এই মামলায়।

  • Link to this news (এই সময়)