পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার
জেলার সরকারি হাসপাতালে যখন ভিড় উপচে পড়ছে তখন আলিপুরদুয়ারের তোপসিখাতায় উত্তরবঙ্গের একমাত্র আয়ুষ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। ন’বছর আগে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে কর্পোরেট ধাঁচের হাসপাতাল তৈরি করা হয়।
কিন্তু চিকিৎসার সব পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও রোগীর অভাবে ধুঁকছে ওই কেন্দ্রীয় হাসপাতালটি। রোগীর সংখ্যা কমতে থাকলে হাসপাতাল চালু রাখা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। হাসপাতালের এই হাল কেন? স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালটির অবস্থান ফালাকাটা-আলিপুরদুয়ার ১৭/ডি জাতীয় সড়ক থেকে ৩ কিলোমিটার ভিতরে।
তোপসিখাতা বাজার থেকে উত্তর দিকে তিন কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে ওই কর্পোরেট হাসপাতাল। অভিযোগ, ওই পথে গণপরিবহনের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় যোগাযোগের অভাবে রোগীরা সেখানে যেতে পারেন না। টোটো বা অটো কোনও রোগীকে নিয়ে গেলেও ফেরার সময়ে যাত্রী মেলে না বলে ওই পথ কার্যত ত্যাগ করেছেন টোটো চালকেরা।
তবে করোনাকালে শহরের বাইরে থাকা ওই হাসপাতালে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য টানা দু’বছর ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই সময়ে ওই হাসপাতালটির আসবাবপত্র জীবাণুমুক্ত করার ফলে বর্তমানে বহু আসবাবপত্র এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, লোহার বেড, আলমারি, টেবিল লিকুইড স্যানিটাইজার দিয়ে বার বার জীবাণুমুক্ত করায় মরচে ধরে তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১০ জন। এখন আছেন ছ’জন। নার্সের অনুমোদিত পদ ১২ জন। আছেন ৪ জন। গ্রুপ ডি পদে ছ’জন থাকার কথা থাকলেও আছেন তিন জন। এখন গড়ে প্রতিদিন আউটডোরে রোগী হয় ২০০–২৫০ জন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেত বলে মনে করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রোগীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য জেলাশাসককে বাস বা অটো রুটের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও কোনও কাজে আসেনি। ওই রুটে যাওয়া বাস বা অটো তপসিখাতা থেকে হাসপাতাল ছুঁয়ে ঘরঘরিয়া বাজারে রাজ্য সড়কে উঠতে পারে। এমনটাই জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন জেলা হাসপাতালের সুপারইনটেনডেন্ট অনির্বাণ দত্ত।
মেডিক্যাল অফিসার উদয় দাস বলেন, ‘চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকার দরুন ইচ্ছে থাকলেও রোগীরা এখানে আসতে পারেন না। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে। এখন আমরা অপেক্ষায় আছি কবে সেই সমস্যার সমাধান হয়।’
আলিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসক দেবব্রত রায় বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা শুরু করার প্রস্তাবটি খুবই ভালো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি আমাকে ওই সমস্যার কথা লিখিত আকারে জানান তবে আমি বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিবহণ আধিকারিক ও উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।’