এই সময়, কাঁথি: কথায় বলে, সস্তার তিন অবস্থা! কিন্তু সেটা কি শুধু ক্রেতার দিক থেকেই চিন্তার, নাকি বিক্রেতারও? পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের মোটরবাইক চুরি চক্রের রহস্যভেদ করতে গিয়ে পুলিশি তদন্তে যা উঠে এল, তাতে স্পষ্ট, সস্তা সব সময়ে সুন্দর নয়। বরং সস্তার তিন অবস্থায় পড়তে হয়েছে বিক্রেতাকেই। সস্তায় বাইক বিক্রির খোঁজ করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিক্রেতারা যে সে কেউ নয়, আসলে বাইক চুরি চক্রের সদস্য।
ব্যাপারটা ঠিক কী রকম?
রামনগর এলাকায় গত কয়েক মাসে পরপর বেশ কয়েকটি মোটরবাইক চুরির অভিযোগ উঠছিল। তবে ঘটনাগুলির কিনারা হচ্ছিল না। পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি চালালেও চোর ধরা পড়ছিল না। তদন্তকারীদের চিন্তা ছিল, এই বাইকগুলো যাচ্ছে কোথায়? অন্য রাজ্যে? নাকি চোরাপথে অন্য জেলা হয়ে ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত পার করে ও পারে পাচার হচ্ছে? বাংলাদেশ সীমান্তে এখন যথেষ্ট কড়াকড়ি থাকায় অন্য জেলা হয়ে সীমান্ত পার করে বাইক পাচার করা মুশকিল।
এর মধ্যেই পুলিশের নজরে আসে, স্থানীয় বেশ কিছু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সস্তায় মোটরবাইক বিক্রি আছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। শুধু গ্রুপে নয়, ব্যক্তিগত স্তরেও বাইকের ছবি দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ করে বলা হচ্ছে, এক লাখ টাকার বাইক মিলবে মাত্র হাজার বিশেকে। এমন লোভনীয় অফার আর কে ছাড়ে! তাই কেউ কেউ সস্তায় সেই বাইক কিনেওছেন।
বিষয়টা কানে যেতেই তক্কে তক্কে ছিল পুলিশ। এ রকম সস্তায় বাইক বিক্রির একটা বিজ্ঞাপন ফরোয়ার্ডেড হোয়াটসঅ্যাপে পেয়ে ক্রেতা সেজে পরিকল্পনা করেন তদন্তকারীরা। অ্যাডভান্স হিসেবে বাইক চোরেদের কথামতো তাদের অ্যাকাউন্টে এক হাজার টাকা অ্যাডভান্সও দেয় পুলিশ। তারপরে আসল দিনে বাইক হ্যান্ডওভারের সময়ে হাতেনাতে পাকড়াও করা হয় দুই চক্রীকে। তাদের জেরা করে ১০টি চোরাই বাইক উদ্ধার করে কাঁথি থানার পুলিশ। পরে আরও পাঁচটি বাইক মেলে ধৃতদের জেরা করে।
পুলিশ জানায়, সৈকত সামন্ত ও প্রসেনজিৎ জানা নামে এই চক্রের দুই পান্ডাকে জেরা করে উঠে এসেছে, তারা হুগলি, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাইক চুরি করে এনে কম দামে বিক্রি করে। আদতে হুগলির খানাকুলের বাসিন্দা সৈকতের রামনগরের দেউলি বাংলোতে একটি বাইক সারানোর দোকান ও গ্যারাজ রয়েছে। সেখানে বাইক সারাইয়ের আড়ালে চোরাই বাইক কেনাবেচার ব্যবসা চালাত সে। মন্দারমণি কোস্টাল থানা এলাকার কালিন্দীর বাসিন্দা প্রসেনজিৎ হোয়াটসঅ্যাপে বিজ্ঞাপন দিয়ে এই সব বাইকের জন্য খদ্দের জোগাড় করত। আর বাইক কেনাবেচার টাকা লেনদেন হতো অনলাইন পেমেন্ট অ্যাপের মাধ্যমে।
সেই সব অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা করছেন, গত কয়েক বছরে আরও কতগুলি মোটরবাইক তারা চুরি করে বিক্রি করেছে। কাঁথির এসডিপিও দিবাকর দাস বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া বাইকগুলির মধ্যে আটটি বাইক আসল মালিকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে বাকি বাইকগুলিও হ্যান্ডওভার করা হবে।’