এই সময়, আসানসোল: ডিজিটাল অ্যারেস্ট চক্রের জাল ছড়ানো রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর ও কেরালাতেও। আসানসোল দক্ষিণ থানার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে কোটি টাকার প্রতারণার মামলায় এমনই কিছু তথ্য পেয়েছেন আসানসোল সাইবার থানার তদন্তকারীরা।
দেশের একটি নামী ক্যুরিয়ার সংস্থা চঞ্চলকে ফোনে জানায়, তাঁর আধার নম্বর ব্যবহার করে ব্যাঙ্ককে পাঠানো ড্রাগ কাস্টমস বাজেয়াপ্ত করেছে। এর পর দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল এবং সিবিআইয়ের নাম করে হোয়াটসঅ্যাপ কল করে চঞ্চলকে জানানো হয়, এই অপরাধে দাউদ ইব্রাহিমের স্লিপার সেল জড়িত রয়েছে। এ ভাবেই ডিজিটাল অ্যারেস্ট দেখিয়ে চঞ্চলের থেকে এক কোটি তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। গত ১৮ জানুয়ারি চঞ্চলের তরফ থেকে এই অভিযোগ পাওয়ার পরে তদন্তে নামে আসানসোল সাইবার থানা।
প্রথমে কলকাতার নিউ টাউন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বেদ আনন্দকে। একে একে উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল থেকে বিশ্বঞ্জয় কুমার, কলকাতার হোটেল থেকে নভজিৎ সিং ও যতীন শর্মা, কলকাতার হরিদেবপুর থেকে সুকৃতী চৌধুরী ও ভাটপাড়ার বাসিন্দা রসিদ খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। দিল্লি থেকে ডিজিটাল অ্যারেস্টের মূল পান্ডা নিখিল রোহতগি ও তাঁর দুই সঙ্গী সুনীল কুমার ও প্রতীক বালুচন্দ্র বাগাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এই ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ডিজিটাল অ্যারেস্টে প্রতারিতদের থেকে লুট করা টাকা বিদেশে ট্রান্সফারের কাজ সক্রিয় ভাবে চালাচ্ছে ব্যারাকপুর ও কেরালার দু'টি চক্র। টাকা যাচ্ছে চিন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, থাইল্যান্ড, নেপালের মতো বিভিন্ন দেশে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ব্যারাকপুরের অপরাধীদের ধরতে পারলেই কেরালার প্রতারকদের খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।
এ দিকে জানা গিয়েছে, গত ১৮ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আসানসোল সাইবার থানায় চঞ্চল ছাড়াও আরও দু’জন ডিজিটাল অ্যারেস্টের অভিযোগ দায়ের করেছেন। গত ২৮ জানুয়ারি দায়ের করা অভিযোগে বার্নপুরের বাসিন্দা পরেশ রঞ্জন সাহু জানিয়েছেন, ৪–২৩ জানুয়ারি প্রায় ২০ দিন ধরে তাঁকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে রেখে তাঁর থেকে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা লুট করে দুষ্কৃতীরা। এর পাশাপাশি গত ৩১ জানুয়ারি ডিজিটাল অ্যারেস্টে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন দুর্গাপুরের বাসিন্দা তরুণকুমার কেশ।
তাঁর অভিযোগ, গত ২৫ জানুয়ারি মুম্বইয়ের ডুগড়ি থানা এলাকার সহকারি সাব–ইনস্পেক্টর পরিচয় দিয়ে তাঁকে ফোন করে আকাশ বর্মা নামে এক ব্যক্তি। তরুণকে জানানো হয়, মুম্বই পুলিশ তাকে কয়েক দিন ধরে খোঁজার চেষ্টা করছে। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অপরাধীরা বেশ কিছু টাকা পাঠিয়েছে, যা মানি লন্ডারিংয়ের মামলার সঙ্গে যুক্ত। এর পর ভিডিয়ো কল করে তাঁকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কাগজপত্র দেখানো হয়। শেষপর্যন্ত ভয় পেয়ে দুষ্কৃতীদের অ্যাকাউন্টে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাঠান তরুণ। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে গত ৩১ জানুয়ারি আসানসোল সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
আসানসোল–দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সদর) অরবিন্দ আনন্দ বলেন, ‘সবাইকে বারবার সচেতন করছি। আইনি ভাবে ডিজিটাল অ্যারেস্ট বলে কিছু হয় না। দেশ জুড়ে বড় চক্র চলছে। যদি এই ধরনের কোনও অডিয়ো বা ভিডিয়ো কল কেউ পান, তা হলে সঙ্গে স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করুন। কোনও ভয় পাবেন না।’