দিনে তিনি তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, আর রাতে ইথার–সমুদ্রের নাবিক। রেডিয়ো নিয়ে আগ্রহটা তাঁর খুব ছোটবেলা থেকেই। ওই রেডিয়োর নেশাই সন্দীপন বসুমল্লিককে টেনে এনেছিল ‘ডিএক্স’–এর জগতে। স্কুলের খাতায়, বিভিন্ন নথিতে তাঁর নাম সন্দীপন থাকলেও নিজের জগতে অর্থাৎ ‘ডিএক্স’ দুনিয়ায় তিনি পরিচিত ‘ভিইউথ্রিজেএক্সডি’ নামে। ডিএক্স— ‘ডি’ অর্থাৎ ডিস্ট্যান্ট বা দূরবর্তী এবং ‘এক্স’ হলো, অঙ্কের নিয়মেই অজানা।
এই দু’টো মিলিয়ে রেডিয়ো নিয়ে আগ্রহীরা ‘ডিএক্সিং’ বলতে বোঝেন, দূরবর্তী কোনও জায়গা থেকে পাঠানো রেডিয়ো সিগন্যাল ধরে খুঁজে বার করা যে, সেই সিগন্যাল কোন জায়গা থেকে ছাড়া হয়েছে।
এই কাজে কে কতটা দক্ষ, তা নিয়ে প্রতি বছরই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় আন্তর্জাতিক স্তরে। ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর, এক মাস ধরে চলা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এশিয়ার সেরা এবং পৃথিবীর টপ টেন ‘ডিএক্সার’–এর শিরোপা পেয়েছেন কলকাতার তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সন্দীপন।
কাজের সময়টায় অফিসে থাকতে হয়, তবে মন পড়ে থাকে ইথার তরঙ্গের দিকে। বাড়ি ফেরার পর শুরু হয় ইথারে পুরোদস্তুর বিচরণ। হেডফোন, কলম, নোটবই এবং ডিএক্স রেডিয়ো নিয়ে বসে শর্ট ওয়েভ ব্রডকাস্ট ব্যান্ডে চলে সন্দীপনের সিগন্যাল খোঁজার পর্ব।
এ যেন বিশাল কোনও দিঘির পাড়ে বসে ছিপ ফেলে মাছ ওঠার প্রতীক্ষা। ফারাক হলো, এখানে টোপ হিসেবে কিছু থাকে না। হাঙ্গেরির রাজধানী বুডাপেস্টের যে সংস্থা সেরা ডিএক্সারদের শংসাপত্র দেয়, সেই ‘টপ টেন ডিএক্স কনটেস্ট’ জানাচ্ছে, যাঁরা ডিএক্স করেন, তাঁদের বিভিন্ন ধরনের শর্ট ওয়েভ ব্রডকাস্ট শুনে লিখে রাখতে হয়, কোন সময়ে এবং কোন জায়গা থেকে সেই সিগন্যাল ছাড়া হয়েছে।
একই সঙ্গে তাঁদের নথিভুক্ত করতে হয় ফ্রিকোয়েন্সি, সিগন্যালের শক্তি কতটা ছিল, সে সবও। তার পর সংশ্লিষ্ট স্টেশনে সেই রিপোর্ট পাঠাতে হয়। রিপোর্টের সব তথ্য মিলে গেলে স্টেশন সেটা স্বীকার করে বিশেষ এক ধরনের কার্ড পাঠিয়ে স্বীকৃতি দেয় সেই ডিএক্সারকে। বুডাপেস্টের সংগঠনটি জানিয়েছে, প্রতি বছর ডিসেম্বরে যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, সেখানে ডিএক্সারদের ১০টি দেশের বিভিন্ন রকম সিগন্যাল ধরতে হয়।
সেই প্রতিযোগিতাতেই দুনিয়ার প্রথম ১০ ডিএক্সারের এক জন হওয়া সন্দীপন বলছেন, ‘১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব রেডিয়ো দিবস। তার আগে এমন একটা সম্মান পেয়ে গর্ব বোধ করছি।’ তিনি জানিয়েছেন, স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ডিএক্সিংয়ের দুনিয়ার প্রতি তাঁর ঝোঁক। ২০১৭ সালে তিনি পেয়েছেন অ্যামেচার রেডিয়ো লাইসেন্স–ও।