এই সময়, ভাঙড় ও গোসাবা: ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই উধাও ঠান্ডা। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জন্য নিত্যদিন ঘন কুয়াশা ও মেঘলা আকাশে সূর্যের দেখা মেলেনি গত কয়েকদিন। চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায় চাষের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। চাষিদের আশঙ্কা, আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনা চলতে থাকলে সব্জি, আম, ফুলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কৃষি, সেচ ও সমবায় দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘ঘন কুয়াশা ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া দিনের পর দিন চলতে থাকলে চাষ বাসের বিপুল ক্ষতি হতে পারে। আমরা সব দিকে লক্ষ্য রাখছি।’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সব্জি ভাণ্ডার বলে পরিচিত ভাঙড়ের দু’টি ব্লকের ১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সমস্ত ধরনের সব্জি ছাড়াও গাঁদা, রজনীগন্ধা ফুল এবং আমের ফলন খুব ভালো হয়। এই মুহূর্তে মাঠ ভর্তি ফুলকপি, বাঁধাকপি, লঙ্কা, ব্রকোলি, টোম্যাটো, ক্যাপসিকাম। চাষিদের বক্তব্য, যে ভাবে প্রতিদিন মাঝরাত থেকে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় চারিদিক ভরে যাচ্ছে, তাতে বাতাসের জলীয় বাষ্প লঙ্কা, ক্যাপসিক্যাম, টোম্যাটোর ফুলে জমা হচ্ছে। অনেক বেলা পর্যন্ত যদি রোদের দেখা না মেলে, তা হলে ওই জল ফুলের গোড়ায় জমে পচন ধরায়। পোকা ও ছত্রাক সংক্রমণও বাড়ছে। চণ্ডীহাট গ্রামের চাষি শৈল মণ্ডল বলেন, ‘খেতের ফুলকপি হলুদ হয়ে গিয়েছে। জমাট ভাব কেটে কপির ফুল ফুটে যাচ্ছে। ফলে বাজারে ঠিকমতো দাম মিলছে না।’
ঘন কুয়াশা আমের মুকুল বের হতে সাহায্য করে। কিন্তু প্রতিনিয়ত কুয়াশা হলে আমের মুকুলে ছত্রাক সংক্রমণ হয় বলে জানালেন আম চাষি সরিফুল মোল্লা। তিনি বলেন, ‘গত বছর আমের ফলন মোটে ভালো হয়নি। এ বছর গাছ ভর্তি মুকুল। কিন্তু আবহাওয়া পরিষ্কার না হলে সব মুকুল ঝরে যাবে।’ হাসেম আলি মোল্লা নামে এক চাষি বলেন, ‘দিন-রাত মেহনত করেও পাতা পচা, সব্জির গায়ে ছোপ দাগ বন্ধ করা যাচ্ছে না। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টোম্যাটো, বেগুনের সাইজ বাড়ছে না। ফলে বাজারে দাম পাওয়া যাচ্ছে না।’
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দায়িত্বে থাকা এক কৃষি আধিকারিক বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এ বছর কুয়াশার প্রভাব বেশি। আমরা চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি, যদি শীতের সব্জিতে গাছের বিভিন্ন রকম রোগ দেখা যায় তাহলে এক লিটার জলে ২ গ্রাম ছত্রাকনাশক মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে। পোকার উপদ্রবে দশ লিটার জলে সাড়ে সাত মিলি ইমিডা ক্লোরাপিজ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। পাতা কুঁকড়ে গেলে লিটার প্রতি জলে এক গ্রাম করে বোরন অনুখাদ্য মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।’
এ দিন সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢেকে ছিল গোটা সুন্দরবন। তার সরাসরি প্রভাব পড়ে নদীতে ফেরি পরিষেবায়। গোসাবার দ্বীপাঞ্চলের জেটি ঘাটগুলিতে ফেরি চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। নদীতেও দৃশ্যমানতা একেবারে কম থাকায় ফেরি পরিষেবা সকালের দিকে কিছুটা বিঘ্নিত হয়। ভুটভুটির গতি অত্যন্ত কম রেখেই মাঝিরা সকালের দিকে যাত্রী পারাপার করেন। গদখালি থেকে গোসাবায় জেটিঘাটে যাত্রীদের সংখ্যাও যথেষ্ট বেশি ছিল। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বাড়তি নজরদারি চালানো হয়েছে এই দু’টি ঘাটে।