• লিঙ্গবৈষম্য উড়িয়ে স্কুলের পুজোর পুরোহিত ৩ ছাত্রী
    এই সময় | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • সৌমিত্র ঘোষ ■ বালি

    ‘ওঁ জয়জয় দেবী চরাচরসারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীণাপুস্তক রঞ্জিতহস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমস্তে...’ স্কুলের সরস্বতী পুজোয় পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্রোচ্চারণ করাচ্ছেন তিন ছাত্রী। সকলে সেই মন্ত্র পুনরুচ্চারণ করে ফুল ছুড়ে দিচ্ছেন দেবীর পায়ে। প্রথা ভেঙে স্কুলের সরস্বতী পুজোয় ছাত্রীদের দিয়ে পুরোহিতের কাজ করানোয় বালির বঙ্গশিশু বালিকা বিদ্যালয় বেশ কয়েক কদম এগিয়েছে গত কয়েক বছরে। এ বারও এই স্কুলের সরস্বতী পুজোয় সোমবার পুরোহিত ছিলেন তিন ছাত্রী। তাঁদের মধ্যে একজন অব্রাহ্মণ পরিবারের। অনিন্দিতা দাস গত ২০২৩ সালে এই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে এখন কলকাতার একটি কলেজে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি মূল সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ করা মন্ত্র উচ্চারণ করেন।

    স্কুলের শিক্ষিকাদের মত, ‘উৎসব সামাজিক মিলনের ক্ষেত্র। আর তা যদি হয় সরস্বতী পুজোর মত সর্বজনীন উৎসব, সেখানে ধর্মীয় সংকীর্ণতা, লিঙ্গ বৈষম্যের ঊর্ধ্বে উঠে সরস্বতী পুজোয় অংশ নেওয়াই আসল কথা। কে পুরুষ, কে নারী, কার কী ধর্ম, কার কী জাত, এ সব গৌণ।’ প্রথা ভাঙার কাজটা এঁরা শুরু করেছিলেন কয়েক বছর আগেই। গত বছর স্কুলের সরস্বতী পুজোয় পুরোহিতের ভূমিকায় ছিল স্কুলের দ্বাদশ ও দশম শ্রেণির ছাত্রী দুই বোন দেবদত্তা চক্রবর্তী ও দেবারতি চক্রবর্তী।

    বালি বঙ্গশিশু বালিকা বিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজোয় এ ভাবে ছাত্রীদের দিয়ে বাগ্‌দেবীর আরাধনায় পৌরোহিত্য করা মেনে নিতে পারেননি রক্ষণশীল সমাজের অনেকেই। তবে প্রশংসাও জুটেছিল আধুনিক মননে ঋদ্ধ অভিভাবকদের অনেকের থেকে। শুরুটা ২০২৩–এ। সে বার দেবদত্তা একাই পুরোহিতের ভূমিকা পালন করে। স্কুলের পুজোয় পুরোহিতের ভূমিকা পালনে সব সময়েই স্কুলের দিদিমনিরা উৎসাহিত করেছেন ছাত্রীদের। দেবদত্তা, দেবারতিদের বাবা শঙ্কর চক্রবর্তী নিজেও পেশায় পুরোহিত। যজমান বাড়ির পুজো ছাড়াও কিছু মন্দিরের নিত্যপুজোতেই তাঁর সংসার চলে।

    তিনি দুর্গাপুজোর মত বারোয়ারি পুজোও করেন। বড় মেয়ে দেবদত্তাও বাবার সঙ্গে থেকে পুরোহিতের কাজ শিখেছে ছোট থেকেই। সে বাবার সঙ্গে দুর্গাপুজোতেও অংশ নিয়েছে পুরোহিত হিসেবে। গত বারই দেবদত্তার সঙ্গে স্কুলের পুজোয় পুরোহিতের কাজে হাত পাকিয়েছে বোন দেবারতিও। দেবদত্তা এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। দেবারতি পড়ে একাদশে। দু’বোন সংস্কৃতে মন্ত্রপাঠ ও পুষ্পাঞ্জলি করায় ছাত্রী–সহ স্কুলের শিক্ষিকা ও অভিভাবকদেরও। পুষ্পাঞ্জলি দেন স্থানীয়দের অনেকেও। দেবদত্তা দেবীর আরতি করেছে। এদের সঙ্গে এ বার একই সঙ্গে বাংলায় মন্ত্রপাঠ ও পুষ্পাঞ্জলি করিয়েছেন প্রাক্তন ছাত্রী অনিন্দিতা দাস।

    অনিন্দিতা বলেন, ‘সংস্কৃত পড়েছি ক্লাস সেভেন ও এইটে পড়ার সময়। এখন অতটা সড়গড় নই। দিদিরাই বাংলা অনুবাদ করে দেন সংস্কৃত মন্ত্রের। যাঁরা মন্ত্রোচ্চারণ করছেন, তাঁরাও বুঝছেন, দেবী সরস্বতীর কাছে তাঁরা কী প্রার্থনা করছেন।’ স্কুলের শিক্ষিকা সোনালি দত্ত ছাত্রীদের নিয়ে গর্বিত।

  • Link to this news (এই সময়)