• উত্তরবঙ্গের চেনা অতিথি ডুবডুবি এ বার দক্ষিণেও
    এই সময় | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • বিশ্বদেব ভট্টাচার্য ■ আসানসোল

    উত্তরবঙ্গের গজলডোবায় এরা সুপরিচিত শীতের অতিথি। তবে দক্ষিণবঙ্গে কোথাও এদের দেখা এত দিন মেলেনি। তবে এ বার তাদের দেখা মিলেছে বার্নপুরের দামোদর সংলগ্ন ভুতাবুড়িতে। এরা হলো অতি সুদৃশ্য কমন মার্গেনসার বা ডুবডুবি পাখি। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় এ বার শীতে পাখি গণনা করতে গিয়ে এদের দেখে রীতিমতো চমকে গিয়েছেন উইংস–এর (ওয়াইল্ড লাইফ ইনফরমেশন অ্যান্ড নেচার গাইড সোসাইটি) পর্যবেক্ষক ও দুর্গাপুর বন বিভাগের আধিকারিকরা।

    পরিযায়ী পাখির আনাগোনায় নতুন সংযোজন ডুবডুবি নিয়ে খুশি উইংস-এর যুগ্ম সম্পাদক শঙ্খ মিশ্র। তিনি বলেন,  ‘তিস্তার আপার গাজোলডোবায় এত দিন শীতের সময়ে বড়জোর পাঁচ-ছ’টি ডুবডুবির দেখা পাওয়া যেত। বেশি সংখ্যায় এদের উপস্থিতি পাওয়া যায় অরুণাচল প্রদেশ, অসমে। কিন্তু বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই বর্ধমান, বীরভূম, মেদিনীপুর সম্বলিত দক্ষিণবঙ্গে কখনওই এই পাখির উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।’ পশ্চিম বর্ধমান জেলার ডিএফও অনুপম খানের বক্তব্য,  ‘এই পাখিটি বাংলায় এতটাই বিরল যে বাংলা ভাষায় এর যা নাম তা খুব একটা প্রচলিতও হয়নি।’

    প্রতি বছর জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্গাপুর বন বিভাগ এবং উইংস-এর পর্যবেক্ষকরা জেলার গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমিগুলিতে পরিযায়ী পাখি ও স্থায়ী ভাবে বসবাসকারী পাখিদের সংখ্যা, স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করেন। বার্ষিক এই পর্যবেক্ষণ জলাশয়গুলির পরিবেশগত অবস্থা এবং বাস্তুতন্ত্র সম্বন্ধে একটি ধারণা পেতে সাহায্য করে। এ বছরও সেই পর্যবেক্ষণ চলাকালীন বিভিন্ন পরিযায়ী পাখি, যেগুলি দশকের পর দশক ধরে এই সব অঞ্চলে আসছে, তাদের সন্ধান তাঁরা পেয়েছেন। কিন্তু সে সব ছাপিয়ে তাঁদের এ বারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সন্ধান, বার্নপুর এলাকায় কমন মার্গেনসার বা ডুবডুবি পাখির উপস্থিতি।

    তবে চিত্তরঞ্জনের জলাশয়গুলিতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকা নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। উইংসের আর এক যুগ্ম সম্পাদক মণীশ চট্টোপাধ্যায় বলেন,  ‘চিত্তরঞ্জন রেলশহরের জলাশয়গুলির মধ্যে সবচেয়ে করুণ অবস্থা কর্নেল সিং পার্ক জলাশয়ের। প্রতি বছরই এখানে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে। চিত্তরঞ্জনের জলাশয়গুলি এক সময় বছরের পর বছর ধরে কচুরিপানায় ভরেছিল। সে সময়ে এখানে আসা পরিযায়ী পাখিগুলি জলের নীচ থেকে খাবার সংগ্রহ করতে পারত না। ফলে তারা অন্যত্র চলে যেতে থাকে। পরিযায়ী পাখিরা সাধারণত তাদের পূর্ববর্তীদের পথ অনুসরণ করে শীতের দেশ থেকে পাড়ি দেয়। বেশ কয়েক বছর পরিযায়ী পাখিরা চিত্তরঞ্জনমুখী না হওয়ায় তাদের পরবর্তী বংশধরেরা এই জলাশয়ে কম আসছে।’

    মণীশ আরও বলেন,  ‘এক মাসের টানা পর্যবেক্ষণে এ বছর আমরা প্রায় পাঁচ হাজার বিদেশি পাখি দেখতে পেয়েছি।’ মাইথনে অবশ্য জলের নীচে খাবার সংগ্রহ করতে যাওয়া এক ধরনের হাসের সংখ্যা বেড়েছে। জলাভূমি সংরক্ষণ এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় আরো উল্লেখযোগ্যভাবে প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছেন তারা।

  • Link to this news (এই সময়)