এই সময়: পাঁচটা চিকিৎসার মতো ক্যান্সার চিকিৎসাও বিনামূল্যে হয় এ রাজ্যের সরকারি পরিষেবায়। কিন্ত সেটা গোটা দেশের ছবি নয়। বেসরকারি ক্ষেত্রে তো বটেই, বাংলার বাইরে দেশের সেরা সরকারি হাসপাতালগুলিতেও অন্যান্য পরিষেবার মতো ক্যান্সার চিকিৎসাতেও রোগী-পরিজনের খরচ হয় বিপুল টাকা। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গরিব-বড়লোক নির্বিশেষে খরচের সেই অঙ্কটা বাৎসরিক গড়ে প্রায় ৩.৩০ লাখ টাকা।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া হাসপাতালগুলির মধ্যে রয়েছে দিল্লি-এইমস কিংবা পিজিআই-চণ্ডীগড় অথবা মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সিএমসি-ভেলোরের মতো বেসরকারি ট্রাস্ট পরিচালিত হাসপাতালও। সর্বভারতীয় ওই সমীক্ষায় অবশ্য বাংলার কোনও হাসপাতাল নেই।
যে হেতু বাংলার অসংখ্য রোগী উত্তর, পশ্চিম কিংবা দক্ষিণ ভারতের ওই সব হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য যান, তাই এই সমীক্ষার প্রতিফলন বঙ্গবাসী ক্যান্সার রোগীর পকেটেও পড়ে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ‘ফ্রন্টিয়ার্স পাবলিক হেলথ’ জার্নালে সমীক্ষাটি গবেষণাপত্র আকারে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। ১২,১৪৮ জন রোগীর উপর হওয়া ওই সমীক্ষা বলছে, হাসপাতাল বাসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি টাকা গলে যায় ওষুধপত্র কেনার পিছনে, প্রায় ৪৫%। এবং আউটডোরে ডাক্তার দেখানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় রক্তপরীক্ষা-সহ বিভিন্ন ডায়গনস্টিক টেস্টে, যা প্রায় ৩৬%।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি পরিষেবায় চিকিৎসা হলেও, ডায়গনস্টিক পরীক্ষার খরচ এ রাজ্যেও রোগীকে বইতে হয়।, এ রাজ্যে সরকারি স্বাস্থ্যে বিনামূল্যে চিকিৎসা মেলে ঠিকই। কিন্তু সেটা অ্যাক্টিভ ট্রিটমেন্ট। অর্থাৎ হাসপাতালে থেকে কেমোথেরাপি, রেডিয়োথেরাপি, সার্জারি ইত্যাদির মতো চিকিৎসা। ফলো-আপ থেরাপিতে ওষুধটুকুই শুধু বিনামূল্যে মেলে।
তবে মাস ছয়েক থেকে বছর দেড়েকের যে ফলো আপ ট্রিটমেন্ট চলে, এবং সেই সময়ে যে নিয়মিত রক্তপরীক্ষা, সিটি স্ক্যান কিংবা পেট সিটি ইত্যাদির মতো ডায়গনস্টিক পরীক্ষা করাতে হয়, সরকারি হাসপাতালে জলদি ডেট মেলে না বলে, রোগীকে বাইরে থেকেই সে সব করাতে হয় পকেটের টাকা দিয়ে। ‘ফ্রন্টিয়ার্স’ জার্নালে প্রকাশিত ওই সমীক্ষার রিপোর্টে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নানা ধরনের নন-মেডিক্যাল খরচে। তাতে বলা হয়েছে, মোট খরচের ৬-২১% যাতায়াতের পিছনে এবং ৪-৫% থাকা-খাওয়ার পিছনে খরচ হয় রোগী-পরিজনের।
রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্যকর্তারাও মানছেন, এই খরচটা সরকারি পরিষেবার সুবিধা নেওয়া রোগীদেরও বইতে হয়। সেই ‘আউট অফ পকেট এক্সপেন্স’ কমানোর লক্ষ্যে সে জন্যই ক্যান্সার চিকিৎসা ও রোগনির্ণয়ের পরিষেবা রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ধাপে ধাপে। স্বাস্থ্যভবনের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘আপাতত সব জেলা হাসপাতালে সপ্তাহে দু’-তিন দিন অঙ্কোলজি আউটডোর হয় এবং সেখানে রোগী ভর্তিও হয়। চলে কেমোথেরাপি। আগামী দিনে এই পরিষেবা মহকুমা স্তরে সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে।’