নীলাঞ্জন দাস ■ রায়গঞ্জ
শৌচালয়ের এমনই দুরাবস্থা যে, বাথরুম যাওয়ার আতঙ্কে যাবতীয় রোগ যন্ত্রণা ভুলে বন্ড দিয়ে বাড়ি বা নার্সিংহোমে চলে আসছেন রোগীরা। এই ছবি কোনও প্রত্যন্ত গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নয়, রায়গঞ্জ সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের। অভিযোগ, এই মেডিক্যাল কলেজের বেশিরভাগ বিভাগের শৌচালয়গুলির বেহাল অবস্থা। বেশিরভাগ সময়েই অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে থাকে এগুলি। যার জেরে দুর্গন্ধে সেখানে যাওয়াই দুষ্কর হয়ে পড়ে রোগী ও রোগীর আত্মীয়দের।
নাকে রুমাল চাপা দিলে বা মাস্ক পড়লেও দুর্গন্ধের হাত থেকে রেহাই মেলে না। অনেক সময়ে এই দুর্গন্ধ পার্শ্ববর্তী বিভাগেও ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। শৌচালয়গুলি নিয়মিত পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই এই সমস্যা বলে অভিযোগ রোগীদের। এই পরিস্থিতিতে রোগীরা ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি' অবস্থায় পড়ে বন্ড দিয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন। যদিও এই সমস্যার কথা জানতে পেরে তা নিরসনে উদ্যোগী হয়েছেন রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী।
রায়গঞ্জ সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বেশ কয়েকটি বিভাগে, বিশেষ করে পুরুষ ও মহিলা সার্জিক্যাল বিভাগ ও মেডিসিন বিভাগের রোগী ও রোগীর আত্মীয়ের ব্যবহারের জন্য শৌচালয়গুলির অবস্থা খুবই বেহাল। বেশ কিছু শৌচালয়ে দরজাগুলির ভগ্নদশা। বাথরুমের জল উপচে বাইরে চলে আসে। এর মধ্যে কতগুলি শৌচালয় তো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রোগীদের তরফ থেকে এ বিষয়ে বারবার অভিযোগ জানানো হলে তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
রায়গঞ্জের বাসিন্দা বিক্রম সরকার বলেন, ‘কিছুদিন আগে মোটরবাইক অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল আমার। তাতে কিছুটা চোট পাই। রাতে হাসপাতালে ভর্তি হই। সকালে বাথরুমে গিয়ে ওই নোংরা অবস্থা দেখে আর সেখানে থাকিনি। ব্যক্তিগত বন্ডে ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে এসেছি।’ রায়গঞ্জেরই আর এক বাসিন্দা জীবানন্দ সিংহ বলেন, ‘হাসপাতালের শৌচালয়গুলি চরম খারাপ অবস্থা। কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে আমি এখানে ভর্তি হই। শৌচালয়ের দুর্গন্ধের কারণে থাকতে না পেরে মোটা টাকা খরচ করে রায়গঞ্জেরই একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি হই।’
এক রোগীর আত্মীয় অভিষেক সাহা বলেন, ‘আমার এক বন্ধু মোটরবাইক অ্যাক্সিডেন্টে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরদিন সকালে ওঁকে শৌচালয়ে নিয়ে গিয়ে দেখি, সেখানকার অবস্থা খুবই খারাপ। দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে, নোংরা জল জমে আছে। হাসপাতালের বাথরুমের এই অবস্থা ভাবাই যায় না। এখান থেকেই তো রোগ–জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে।’ অপরএক রোগীর আত্মীয় মাফিজা খাতুন বলেন, ‘আমার বৌদি এই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁকে দেখাশোনা করার জন্য আমি আছি হাসপাতালে আছি। এখানকার বাথরুমগুলি খুবই নোংরা।’
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের এমএসভিপি প্রিয়ঙ্কর রায় বলেন, ‘বিষয়টা মেডিক্যাল কর্পোরেশন দেখে। সমস্যার কথা স্বাস্থ্য ভবনে জানানো হয়েছে। ঠিক করার কাজ চলছে।’ রায়গঞ্জের বিধায়ক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য কৃষ্ণ কল্যাণী বলেন, ‘এই সমস্যা দূর করতে হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব আমি নিয়েছি। শৌচালয়গুলির জল নিকাশি ব্যবস্থার কিছু ত্রুটি রয়েছে, সেগুলি ঠিক করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।’