• গরমকে উপেক্ষা করেই পুজোয় চেনা ভিড়
    আনন্দবাজার | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • অপটু হাতে পরা শাড়ির আঁচল ময়দানের ধুলোয় গড়াচ্ছে। শাড়ির কুঁচিও এলোমেলো। গাছের তলায় দাঁড়িয়ে থাকা সদ্য তরুণীকে ঘিরে আরও কয়েক জন সমবয়সি হাসি-মজায় ব্যস্ত। কপালের ঘাম রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতেই কিছুটা চড়া গলায় সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে তরুণীকে বলতে শোনা গেল, ‘‘তোরা আমার শাড়িটা ঠিক করে দিবি না কি আমি বাড়ি ফেরার ট্যাক্সি ধরব? একে শাড়ির এই অবস্থা, তার উপরে গরম— পুরো সাজটাই আজ মাটি হয়ে গেল!’’

    গত কয়েক দিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী শহরের তাপমাত্রা। শীতের অনুভূতি কার্যত মিলছে না। রাতের দিকে কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হলেও জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকেই দিনের বেলা রীতিমতো গরম লাগছে বলে আক্ষেপ করছেন শহরবাসী। রবিবার, সরস্বতী পুজোর দিনেও এর ব্যতিক্রম হল না। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরস্বতী পুজোয় শহরে দিনের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ২৮ ডিগ্রির আশপাশে। যা স্বাভাবিকের থেকে প্রায় পাঁচ ডিগ্রি বেশি। সকালের ঘন কুয়াশা কাটিয়ে দুপুরের দিকে পরিস্থিতি এমন হয় যে, বাইরে বেরিয়ে ঘামতে হয়েছে আমজনতাকে। একে আবহাওয়ার খামখেয়ালি ভাব, তার উপরে রবি এবং সোমবার জুড়ে সরস্বতী পুজো— জোড়া বিপত্তিও সরস্বতী পুজোয় শহরের চেনা ছবির বদল ঘটাতে পারল না। সকালের দিকে রাস্তাঘাটে তেমন ভিড় চোখে না পড়লেও চেনা ছবি দেখা গেল বেলা বাড়তেই। স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে গঙ্গার ধার, ময়দান চত্বর চলে গেল কমবয়সিদের দখলে।

    পঞ্জিকা মতে সরস্বতী পুজো শুরু হয়েছে এ দিন বেলা প্রায় সাড়ে ১২টা থেকে। চলবে আজ, সোমবার সকাল পর্যন্ত। ফলে, এ দিন সকালের দিকে স্কুল, কলেজগুলি কার্যত ফাঁকাই ছিল। যদিও বেলা বাড়তেই সেই ছবি দ্রুত বদলাতে থাকে। শাড়ি, পাঞ্জাবি পরে স্কুল, কলেজমুখো হন পড়ুয়ারা। যদিও দুপুর পেরোতেই কলেজ-পাড়ার ভিড়ের বড় অংশকে দেখা গেল গঙ্গাপাড়, ময়দানমুখী হতে। কেউ কেউ আবার পুজোর অঞ্জলি শেষ করেই সোজা লাইন দিলেন রেস্তরাঁর বাইরে।

    এ দিন দুপুরের পরে সব থেকে বেশি ভিড় দেখা গিয়েছে প্রিন্সেপ ঘাটে। পরিস্থিতি এমন হয় যে, সংলগ্ন রাস্তায় গাড়ি রাখার জায়গা ছিল না। গঙ্গার পাড় জুড়ে সাজানো বসার চেয়ার থেকে শুরু করে রাস্তা, সব জায়গায় ছিল থিকথিকে ভিড়। কেউ বান্ধবীর সঙ্গে এসে নিজস্বী তুলেছেন, কাউকে আবার দেখা গিয়েছে গঙ্গার পাড়ে বসে থাকতে। চেনা ভিড়ের ছবি ছিল উত্তরের বাগবাজারে গঙ্গার ধারেও। এ দিন প্রিন্সেপ ঘাটে বান্ধবীর সঙ্গে এসেছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী তথাগত দাস। তিনি বললেন, ‘‘এ বছর সরস্বতী পুজো রবিবার হওয়ায় সুবিধা হয়েছে। ছুটি নেওয়ার ঝামেলায় যেতে হয়নি। সারা দিন ঘোরাঘুরি করা যাবে।’’

    কিছুটা এগোতেই এক দল বন্ধুদের মধ্যে এক জনকে আবার দেখা গেল ভিডিয়ো কলে বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলতে। জিজ্ঞাসা করতেই যুবক বললেন, ‘‘পড়াশোনার জন্য ও বিদেশে। প্রতি বছর আমরা দল বেঁধেই এখানে আসতাম। ও এই বছর নেই, তাই ভিডিয়ো কলেই ওকে ভিড় দেখাচ্ছি।’’

    ময়দান, ভিক্টোরিয়াতেও ছিল একই ছবি। তবে অন্য বারের তুলনায় ময়দানে ভিড় ছিল কিছুটা হলেও কম। গাড়ি, বাইক নিয়ে অনেকে এসে দাঁড়ালেও কিছু সময় পরে অধিকাংশকেই চলে যেতে দেখা গিয়েছে। অনেকে ভিড় কম হওয়ার জন্য সরস্বতী পুজো দু’দিন হওয়ার দিকেই ‘আঙুল’ তুলেছেন।

    তবে উৎসবের নামে পথের বেপরোয়া ছবির বদল হয়নি এ বছরও। হেলমেট ছাড়াই দেদার বাইক ছোটানোর ছবি দেখা গিয়েছে। ময়দানের রাস্তায় এমনই এক জনকে জিজ্ঞাসা করতে তাঁর উত্তর, ‘‘এত সাজ, বাহারি পোশাক পরে দল বেঁধে বেরিয়েছি, আজ কি হেলমেটে মুখ ঢাকলে চলে? আজ সবেতেই ছাড়।’’

  • Link to this news (আনন্দবাজার)