রনি চৌধুরী ■ ধূপগুড়ি
পুলিশ–পাড়ায় বেড়ে উঠছে টিয়াপাখির ছানারা। সাতসকালে তাদের ডাকে ঘুম ভাঙছে পুলিশকর্মীদের। এমন দৃশ্য জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি থানার। গত একমাস ধরে থানার গুরুগম্ভীর পরিবেশকেই আমূল বদলে দিয়েছে টিয়াপাখির ঝাঁক। অথচ একটা সময় ছিল যখন ধূপগুড়ি থানার নাম শুনলে বাঘে-গোরুতে এক ঘাটে জল খেত। সেই থানাতে অভিযোগ দায়ের করতে আসা মানুষ এখন মুগ্ধ হন পাখির ডাকে।
আইসি অনিন্দ্য ভট্টাচার্যের উদ্যোগে থানা চত্বরে থাকা প্রায় ২০টি গাছ আমূল বদলে ফেলা হয়েছে। মগডালে ঝুলছে সবুজ রঙের মাটির হাড়ি। তার মধ্যে ফুটো করে দেওয়া। আচমকা মনে হতে পারে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। টিয়াদের বসবাসের জায়গা করে দিতে এমন উদ্যোগ। সেখানেই আপাতত ডেরা বেঁধেছে কয়েকশো টিয়াপাখির ঝাঁক।
বর্তমানে শহরাঞ্চলে টিয়া পাখি তেমন দেখা যায় না। এমনকী কোথাও বাসা বেঁধেছে জানতে পারলে অনেকে বিক্রির জন্য নিয়েও চলে যান। সেখানেও সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে পুলিশকর্মীদের। নিয়মিত নজরদারি করেন তাঁরা। জল দেন, যোগান খাবারও। মঙ্গলবার যেমন ধূপগুড়ি থানার আইসি অনিন্দ্য ভট্টাচার্যকে দেখা গেল গাছের নীচে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকতে। কাছে যেতেই বোঝা গেল, মাটির হাঁড়ির ভিতর থেকে মাথা বের করে রেখেছে একটি ছোট্ট ছানা। আরেকটি পাখি তাকে আদর করছে ঠোঁট দিয়ে। কিছুটা উঁচুতে অন্য একটি টিয়া পাখি বসে পাহারা দিচ্ছে নীচে থাকা দু'জনকে। যাতে অন্য পাখি বা কাক এসে হামলা চালাতে না-পারে।
শুধু পুলিশকর্মীরাই নন, প্রতিদিন টিয়া পাখিদের এমন খুনসুটি দেখতে গাছতলায় ভিড় জমাচ্ছেন আশেপাশের ব্যবসায়ী থেকে বাসিন্দারাও। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, ধূপগুড়ি থানার আইসি সুজয় তুঙ্গা প্রথম এই ধরনের উদ্যোগ নেন দু'বছর আগে। মাঝে এ কাজে খানিকটা ভাঁটা পড়েছিল। ফের নতুন উদ্যোমে শুরু হয়েছে পাখি–রক্ষার কাজ।
পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাসের কর্তা নফসর আলি বলেন, ‘ডুয়ার্সে বিভিন্ন জায়গায় মাঝেমধ্যেই দেখা যায় পাখি শিকার করছে যুবকরা। আবার কখনও টিয়া–ময়না বাজারে বিক্রির জন্যও নিয়ে আসছে। তবে টিয়া সংরক্ষণের ব্যাপারে আজ পর্যন্ত রাজ্যের কোথাও পুলিশকে এমন উদ্যোগ নিতে আমরা অন্তত দেখিনি।’
ধূপগুড়ি থানার আইসি অনিন্দ্য ভট্টাচার্য বলেন, ‘পাখিগুলির প্রতি আমাদের মায়া জড়িয়ে গিয়েছে। আমরা দেখে রাখি যাতে সকলে ভালো থাকে। থানার পুলিশকর্মীদেরও বলা আছে, তাঁরা যেন টিয়াগুলির প্রতি সব সময়ে নজর রাখেন। আসলে এতে থানার পরিবেশও অত্যন্ত সুন্দর দেখায়।’
থানার ঠিক উল্টো দিকে থাকা স্থানীয় ব্যবসায়ী অরুণ রায়ের কথায়, ‘আমরাও সকাল-বিকেল কাজের ফাঁকে গাছের দিকে তাকিয়ে থাকি পাখিদের দেখার জন্য। খুব ভালো লাগে সবুজ রঙের টিয়াগুলিকে। একটা এনার্জি পাওয়া যায়। পাখির ডাকও শুনতে পাই সকাল-বিকেল। মন ভালো করা একটা পরিবেশ থানায় তৈরি হয়েছে।’