নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা ছাড়া কৃষ্ণনগর শহরের পুজোর ভাসান যেন অসম্পূর্ণ। প্রতিবছর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পুজোর ভাসানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় মৃৎশিল্পের শহরে। বিশেষ করে জগদ্ধাত্রী পুজো এবং কালীপুজোর ভাসানেই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে বেশি। বিগত কয়েক বছর ধরে, সরস্বতী পুজোও বাদ পড়ছে না। আর তাই এবছর সরস্বতী পুজোর ভাসান উপলক্ষ্যে কড়া পুলিসি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ বুধবার সরস্বতী পুজোর ভাসান উপলক্ষ্যে প্রায় পাঁচশো পুলিস মোতায়ন করা হচ্ছে কৃষ্ণনগর শহরে। যে দলে পুলিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও রয়েছেন। সেইসঙ্গে শহরের নিরঞ্জনের শোভাযাত্রা যে রাস্তা দিয়ে যাবে তার আশেপাশের গলিতে ব্যাপকভাবে পুলিসি টহল বাড়ানো হয়েছে। এরকম প্রায় ৪২টি গলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানেও কম করে প্রায় একশো জন পুলিস মোতায়েন থাকছে। তবে এবছর দেখা যাচ্ছে, জগদ্ধাত্রী পুজোর থেকেও সাঙের প্রতিমা বেড়েছে সরস্বতী পুজোতে। যা পুলিসের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার (হেড কোয়ার্টার) মাকওয়ানা মিতকুমার সঞ্জয়কুমার বলেন, ‘ভাসান সুষ্ঠুভাবে করতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিস মোতায়েন থাকছে শহরজুড়ে। যাতে কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই, দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রতিমা নিরঞ্জন সময় মতো করতে পুশিং পার্টি থাকছে। এছাড়াও শহরের অলিতে গলিতে ভাসানের রাতে পুলিস টহলদারি বাড়বে।’
বিগত রবিবার ও সোমবার দু’ দিন ধরে কৃষ্ণনগর শহরে সাড়ম্বরে সরস্বতী পুজো হয়েছে। রীতিমতো উৎসবের মেজাজ ছিল মৃৎশিল্পের শহরজুড়ে। সেই মতো মঙ্গলবার থেকেই ভাসান শুরু হয়। যদিও এদিন শুধুমাত্র শহরের স্কুলের কিছু প্রতিমার নিরঞ্জন করা হয়। তবে স্কুলের ভাসানকে কেন্দ্র করেও ক্ষণিকের জন্য বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ের কাছে, কৃষ্ণনগর হাই স্কুলের পড়ুয়ারা নিজেদের মধ্যে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। ঘটনায় এক পড়ুয়া জখম হয়। তাকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোতে কৃষ্ণনগর শহরে ৪৫টির মতো সাঙের প্রতিমা বের হয় বিসর্জনের জন্য। কিন্তু সেখানে দেখা যাচ্ছে সরস্বতী পুজোয় সাঙের প্রতিমার সংখ্যা ৬৬টি। পুলিসের তরফ থেকে নিরঞ্জনের রুট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যে সমস্ত প্রতিমার সঙ্গে শোভাযাত্রা বেরবে না, তাঁদের প্রতিমা কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড় থেকে সদরের মোড় দিয়ে এভি স্কুল মোড় হয়ে রাজবাড়ির দিকে যাবে। আর সাঙের প্রতিমা সরাসরি হাই স্ট্রিটের রাস্তা দিয়ে রাজবাড়ি থেকে কদমতলা ঘাটের দিকে যাবে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, অতিরিক্ত পুলিস সুপার, ডিএসপি এবং ১২ জন আইসি পদমর্যাদার অফিসার সহ মোট ১০২ জন অফিসার, সেইসঙ্গে ৩১৭ জন কনস্টেবল মোতায়েন করা হবে নিরঞ্জনের রাস্তায়। অতীতে কালীপুজোর ভাসানের রাতে শহরের হাই স্ট্রিট সংলগ্ন গলিতেই খুন হয়েছিল। বছর দুই আগে, নিরঞ্জনের রাতে গণপিটুনিতে মারা যান এক ভ্যান চালক। এমনকী সরস্বতী প্রতিমা ভাঙার মতো ঘটনাও ঘটেছে কৃষ্ণনগর শহরে। তাই এবছর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না পুলিস প্রশাসন। গতবছর পুলিসি সক্রিয়তার কারণে জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসানে বড় কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। কৃষ্ণনগর শহরে প্রতি বছর পুলিসি পাহারায় প্রতিমা নিরঞ্জন নিয়ে অনেকেই মনক্ষুণ্ণ। তাঁরা মনে করছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভাসান করতে ব্যর্থ হচ্ছে পুজো কমিটিগুলো। যার জন্য পুলিসকে অতিসক্রিয় হতে হচ্ছে।